জাতীয়

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার বিরুদ্ধে রিট শুনানির দিন ধার্য

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধানের বিরুদ্ধে ২৮ বছর আগে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল, এখন সেই আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে।

রিটকারীদের মধ্যে পাঁচজন বেঁচে আছেন। তাদের একজন শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান বলেছেন, অনেক দেরিতে হলেও তাদের আবেদন শুনানিতে এসেছে, সেজন্য তারা খুশি।

আইনজীবীরা বলেছেন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

এটিই রিট আবেদনের মূল বক্তব্য এবং এই ইস্যুটি এখনো বহাল থাকায় দীর্ঘদিন পর হলেও তা শুনানিতে এসেছে।

রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উঠেছে হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চে।

এই রিট আবেদনটির শুনানির জন্যই এই বেঞ্চটি গঠন করা হয়েছে।

জেনারেল এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

তখন এর বিরুদ্ধে রিট আবেদনে আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেও শুনানি হয়নি।

পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীতে অন্যান্য ধর্মের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখা হয়।

সেই প্রেক্ষাপটে আগের রিট আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর ঐ বিধান চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করা হয়েছিল।

তখন আদালত আইনি পরামর্শের জন্য ১৪জন সিনিয়র আইনজীবীকে এমিকাস কিউরি নিয়োগ করলেও তাদের বক্তব্য শোনা হয়নি।

রিট আবেদনের পক্ষের একজন আইনজীবী জগলুল হায়দার বলেছেন, ইস্যুটি বহাল থাকায় অনেক বিলম্বে হলেও শুনানি শুরু হলো।

১৯৮৮ সালে রিট আবেদন করেছিলেন লেখক সাহিত্যিক, সাবেক বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ পনেরো জন বিশিষ্ট নাগরিক।

তাদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য,কবি সুফিয়া কামাল, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদসহ দশজন মারা গেছেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং বদরুদ্দীন উমরসহ যে পাঁচজন এখন বেঁচে রয়েছেন, তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলছিলেন, বিষয়টা নিয়ে এগুনোর ক্ষেত্রে তারা একসময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছিলেন।

‘আমাদের দিক থেকেও একটু গাফিলতি ছিল। এই বিষয়ে কতটা এগুনো যাবে তা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আমাদের আশা ছিল, রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে। এখন আমরা এর একটা ফয়সালা চাই।’

জেনারেল এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পালাক্রমে ক্ষমতায় থেকেছে কিন্তু কোনো দলই বিষয়টাতে হাত দেয়নি।

এমনকি আওয়ামী লীগের সময় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন আনা হলেও ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দাবি করে, তাদের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

পঞ্চদশ সংশোধনীতে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে দায়ের করা রিট আবেদনের মূল বক্তব্য ছিলো- এই বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা বক্তব্যের সাথেও সাংঘর্ষিক।

এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘সাংবিধানিক কোনো বিষয়ে মামলা হলে তাতো ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। আর আদালত যেহেতু আবেদনের ওপর কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। সেজন্য দেরিতে হলেও শুনানি হচ্ছে।’

বিষয়টিতে শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ মার্চ। (সূত্র: বিবিসি)

Share