৪ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার বেলা ১১ টা-সাড়ে এগারটার সময় হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে আমার বিরুদ্ধে সহকারী অধ্যাপক (নন ক্যাডার ভূক্ত) ফাতেমা আকতার অভিযোগ আকারে অশালীন,অসত্য ও বস্তনিষ্ঠহীন নিজের সুবিধামত তথ্য-উপাত্ত সাজিয়ে-গুচিয়ে হাজীগঞ্জে কর্মরত প্রায় ২৫ জন সাংবাদিকদেরকে আমন্ত্রণ করে কলেজ ক্যাম্পাসে এনে তাদের সামনে একটি লিখিত বক্তব্যে দেন।
ঐ দিন ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক পরীক্ষা–যা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সম্প্রতি পিআরএল থাকা অবস্থায় বা অবসরে যাওয়া পর কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কলেজের ক্যাম্পাসের শিক্ষক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন নামকরণ করে-সাংবাদিকদের সামনে ঐ লিখিত বক্তব্যটি দেন। যা পরের দিন চাঁদপুরের দু’তিনটি প্রিন্টিং পত্রিকা ও একটি অনলাইন পোর্টালে আমার দৃষ্টিগোচর হয়।
এদিনও সাংবাদিক বন্ধুদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম ‘আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে,তা সম্পূর্ণ অসত্য,বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি যা করেছি-সবই আইনগতভাবে করেছি। কারণ ওনাকে অবসরে আমি পাঠাবার কেউ নই। আইনগতভাবে বা সরকারি চাকুরির রেওয়াজ অনুযায়ী মিসেস ফাতেমা আকতার অবসরে গেছেন্। এখানে আমার কিছুই করার নেই। তিনি আরও বলেছিলেন,‘আমি আইনের বাহিরে কিছুই করতে পারবো না। তাহলে আবার আমি জবাব দিহি করতে হবে আর না হয়-জেল খাটতে হবে। নিয়মের বাহিরে দু’জন যে সব অর্থ নিয়েছেন-তা সবই লিখিত মোচলিকা দিয়ে গ্রহণ করেছেন। যা পরবর্তিতে উনাদের যে কোনো আয়ের উৎস হতে তা পরিশোধ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন,‘আমি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। কলেজটি বর্তমানে সরকারি যা হাজীগঞ্জবাসী তথা চাঁদপুরের গৌরব। কলেজটি হাজীগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত একটি সুনামধন্য সরকারি কলেজ । তাই সরকারি বিধি-বিধানের বাহিরে প্রসাশনিক,আর্থিক ও একাডেমিক কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি না। আমার অধীন ২১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন-যা দেশের সবচেয়ে উচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রিধারী। আমার ঔ সব ডিগ্রিধারী সহকর্মীগণ আমাকে কলেজ পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছেন। আমাকে সকলের সহযোগিতায়ই কলেজ চালাতে হয়। এর অর্থ-এ নয়-কাউকে সুযোগ-সুবিধা বেশি-কম দিয়ে থাকি।
মিসেস ফাতেমার বুঝা উচিৎ-কলেজ থেকে অবসরে চলে যাওয়ার পর কলেজের প্রতি তার আর কি দায়িত্ব পালন বাকি থাকে-যে তাকে প্রতিদিন কলেজে এসে শিক্ষক মিলনায়তনে নানা ধরণের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার চর্চ্চা করা এবং একজন প্রশাসকের মত অঙ্গভঙ্গিতে আচার-আচরণ করা। এ ছাড়াও তিনি একজন নন ক্যাডার ভূক্ত কলেজ শিক্ষক হয়ে নিজকে অধ্যাপক হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি দিচ্ছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত পরিপত্রে কারো নাম অন্তর্ভূক্ত না হলে তিনি তার নামের আগে অধ্যাপক বা প্রফেসর লিখতে পারেন না। এদিকে প্রতিদিনই তার কলেজে উপস্থিতি ও নানা ধরণের উক্তি বা কথোপকথন সাধারণ শিক্ষকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ।অতীতে তিনি ছুটি ভোগের ক্ষেত্রে কোনো রকম নিয়ম-নীতি অনুস্মরণ করেন নি। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমি এসব বিষয়গুলো তার চাকুরি জীবনের শেষ অধ্যায়ের কারণে আমলে নেই নি।’
২৬ জুন ২০২৩ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর,ঢাকা প্রদত্ত হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের সকল আয়ের উৎসের সঠিক হিসেব-নিকেশ আমারে উপরে অর্পণ করা হয়েছে এবং সকল আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । সুতরাং সরকারি বিধি উপেক্ষা করার এখতিয়ার আমার নেই। এবারের ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন,‘প্রতিবছর ফলাফল সন্তোষজনক হলেও এবারেরটি তুলনামূলক একটু খারাপ হয়েছে। কেননা প্রতিবছর শিক্ষার্থীর মেধার মান এক রকম হয় না । তাই এ বিষয়ে আমি ও আমার শিক্ষকগণ দু:খ প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়াও বোর্ডেরও ফলাফল খারাপ হয়েছে। ’
অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.মোশাররফ হোসেন ভূক্ত সহকারী অধ্যাপক মিসেস ফাতেমা আকতার (নন ক্যাডার) ও মিসেস মল্লিকা রানী পালের (নন ক্যাডার) বৈরিতার প্রেক্ষাপটের কারণ তুলে ধরে ৬ নভেম্বর কিছূ তথ্য উপস্থাপন করেন -যা হলো : মিসেস ফাতেমা আকতার,সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান। জন্ম- ১ জুন ১৯৬৫। তিনি ১৯৯২ সালে এ কলেজে যোগদান করেন। কলেজ সরকারি করণ হয় ৮ আগস্ট ২০১৮। পদ সরকারিকরণ হয় -৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ১ জুলাই ২০২৪ হতে তিনি সরকারি বিধি মতে-বর্তমানে পিআরএল আছেন। যেহেতু কলেজ ও পদ দু’টি সরকারি সেহেতু সরকারি বিধি অনুযায়ী তিনি একজন সরকারি কমকর্তা । ১ জুন ২০২৪ সনে উনার ৫৯ বৎসর পূর্ণ হওয়া তিনি পি-রি-টায়ারমেন্ট লিভ এ আছেন ।
মূল নেতন ৪৯,৯৮০ টাকা। বিশেষ সুবিধা ২৪৯৯,বাড়ি ভাড়া-১ হাজার ,চিকিৎসা-৫শ বাদ যাবে। কল্যাণ ১৯৯৯ টাকা, অবসর ভাতা – ২৯৯৯ টাকা। নীটদাবি –৪৮, ৯৮১ টাকা যা তিনি পিআরএল এ চলাকালেও মাসে মাসে পুুরু বেতন পেয়ে থাকেন।
কলেজ : মূলবেতন ৪৭,৫৯৬, চিকিৎসা-১ হাজার টাকা, (নি:সন্তান হওয়ায় শিক্ষা ভাতা বাদ)-বাড়ি ভাড়া ৩৫%-১৬৫৫৮ টাকা, ৪০%- ১৯০৩৮ টাকা। নীটদাবি -১৭৬৫০ টাকা ।
এখন প্রশ্ন হল একই পদে চাকুরিরত অবস্থায় দু’জায়গা থেকে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা পান কিভাবে -তার কোন বিধান সরকারিভাবে নেই। বিষয়টি উনাদের নিজেদের মনগড়া ও খেয়ালখুশি মত যা ইচ্ছে তা করেছেন বা আমাকে করতে বলছেন। উনার চাকুরি কাল ৫৯ বৎসর উত্তীর্ণ হওয়া জুন ২০২৪ থেকে কলেজ অংশের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। ঈদের বোনাস সম্পকে তিনি বলেন, মিসেস ফাতেমা আক্তার পহেলা জুন হওয়া ২০২৪ এ ৫৯ বৎসর পূর্ণ হওয়া উনি কলেজ অংশ থেকে একটি বোনাস পান।
এপ্রিল ২০২৪ মূল বেতনের ৭৫% হারে ৩৫,৬৯৭- টাকা এবং এমপিও-সরকারি অংশের বেনাস ঈদুল ফিতর (২৫% হারে ১১,৯০০ টাকা এবং ঈদুল আজহার ২০২৪ এর বেলায়–বাাজেটের ঘাটতি থাকাতে তখন সরকার দেয়নি। দিয়েছে পূজার সময় অক্টোবর ২০২৪-১১,৯০০ টাকা। অর্থাৎ পিআরএল এ যাওয়ার পরও তারঁ বেতন ও বোনাস চলমান রয়েছে।
মিসেস মল্লিকা রাণী পাল (নন ক্যাডার ) সহকারী অধ্যাপক, বাংলা। জন্ম-২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫। তিনি ১৯৯৩ সালে এ কলেজ চাকুরি শুরু করেন। কলেজ সরকারি- হয় ৮ আগস্ট ১০১৮। পদ সরকারি- ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। পিআর এল – যেহেতু, কলেজ ও পদ দু’টি সরকারি সেহেতু সরকারি বিধি অনুযায়ী উনি একজন সরকারি কমকর্তা । ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সনে উনার ৫৯ বৎসর পূর্ণ হওয়ায় তিনি পি-রিটার্য়ারমেন্ট-লিভ এ আছেন। মূল বেতন -৪৯,৯৮০ টাকা । এখান থেকে বিশেষ সুবিধা-২,৪৯৯ টাকা বাড়ি ভাড়া– ১ হাজার ও চিকিৎসা ভাতা -৫শ’ বাদ যাবে ।
কল্যাণ-১৯৯৯ টাকা এবং অবসর ভাতা ২,৯৯৯ টাকা । ৪৮,৯৮১ তিনি অবসরে যেয়েও পুরো টাকা তিনি উত্তোলন করছেন। তিনি পিআরএল – এর সময়েও মাসে মাসে পুরু টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। কলেজ অংশ: মূলবেতন- ৪৯,৯৮০ টাকা,চিকিৎসা-১ হাজার টাকা,শিক্ষাভাতা ৫শ টাকা,বাড়িভাড়া ৩৫ % অনুসারী-১৭,৪৯৩ টাকা ,নীটদাবি- ৪০ % হারে- ১৯,৯৯২ টাকা।
এখন প্রশ্ন হল- তিনিও ঐ একইভাবে মিসেস ফাতেমা আক্তারের মতই একই পদে চাকুরিরত অবস্থায় দু’ জায়গা থেকে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা পান কিভাবে এবং কলেজের অংশ নেয়া কোনো সরকারি বিধি বা বিধান পাওয়া পায় নি। অথচ উনাদের নিজদের মনগড়া ভাবে বা খেশালখুশি মত টাকা পাওয়ার কথা চিন্তা করেছেন। উনার চাকুরিকাল ৫৯ বছর উত্তীর্ণ হওয়া অক্টোবর ২০২৪ থেকে কলেজ অংশের বেতন বন্ধ আছে। ঈদে বোনাস প্রসঙ্গে বলা যায় – মল্লিকা রাণী পাল সরকারি বিধান মতে ২০২৪ সালে কোনো বোনাস পাবেন না। কারণ যেহেতু তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ভূক্ত ।
এদিকে এ বছর পূজা হয় অক্টেবরে। তার চাকুরি শেষ হয় ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ । যা ৫৯ বৎসর পূর্ণ হয়। কিন্ত তিনি সু-কৌশলে ঈদুল ফিতরের সময় একটি বোনাাস গ্রহণ করে নিয়ে যান । যা মূলবেতনের ৭৫% হারে ৩৫,৬৯৭ টাকা (এপ্রিল ২০২৪্ )। যা তিনি মোটেই প্রাপ্য নন। বোনাসের টাকা সরকারি বিধি মতে ফেরত দিতে তিান বাধ্য। সরকারি মতে ঈদ বোনাসের হার ২৫% । উপরন্ত ঈদুল আজহায় জুলাই্ ২০২৪ আরও একটি বোনাস জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন এবং সকল শিক্ষক এবং পিআরএল এ যাওয়া আরও একজন শিক্ষক (মিসেস মল্লিকা রাণী পাল) মিসেস ফাতেমা আক্তারকে নিয়ে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে । কিন্তু আমি (অধ্যক্ষ) তা’দেই নি।
উল্লেখ্য -এমপিও’র এর সরকারি অংশের বোনাস যা যথাসময়ে পূজার সময় পেয়েছেন। এখন কলেজের অংশ পাওয়ার জন্য মল্লিকা রাণী পাল মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যদিও এমপিও’র এ -বেতন ও বোনাস পিআর এল যাওয়ার পরও চলমান রয়েছে -এতে আমি অধ্যক্ষ কোন আপত্তি করছি না। কিন্ত কলেজ সরকারি হওয়ার পর ছাত্রীদের থেকে কোনো বেতন নেয়া হয় না এবং ছাত্রদের পুরু মাসিক বেতন ২০ টাকা হওয়ায় চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের বেতন কোন ফান্ড থেকে দিবো- তার কোনো ব্যবস্থা নেই ।
২০১৪ সালের বিধি অনুযায়ী এক তহবিলের টাকা অন্য তহবিলের অধীনে খরচ করা যাবে না বিধায় নতুন কোন ফান্ড সৃষ্টির সুযো নেই। সরকারি বিধান মতে ফান্ড তৈরিরও সুযোগ নেই। আবার সরকারি বিধান মতে -অতাবশ্যকীয় তহবিল থেকে অতিথি শিক্ষক ও নৈশ প্রহরীর বেতন দেয়া হচ্ছে।
আবদুল গনি, ৭ নভেম্বর ২০২৪
এজি