দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চলমান বন্যায় দুর্গত মানুষদের সহযোগিতা করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে টিএসসিতে এই কর্মসূচি শুরু হয়, যা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচির প্রথম দিনে অনলাইন ও অফলাইনে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা হয়। দিনভর ত্রাণ সংগ্রহ করা সামগ্রী গতকাল রাতে টিএসসি থেকে ত্রাণবোঝাই কয়েকটি ট্রাক নিয়ে দুর্গত এলাকায় গেছে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল টিএসসির সঞ্জিব চত্বরের ফটকে ত্রাণ সংগ্রহ করছে। ঢাকা শহরের নারী, পুরুষ, শিশু থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী তাদের কাছে জমা দিচ্ছে। এর মধ্যে কে কী জমা দিচ্ছে এবং নগদ টাকার পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবী দলটি লিখে রাখছে। নগদ অর্থ ব্যতীত অন্যান্য যে মালামাল ত্রাণসামগ্রী হিসেবে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো স্বেচ্ছাসেবী আরেকটি দল টিএসসি ক্যাফেটেরিয়াতে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আরেকটি দল সেগুলো প্যাকেজিংয়ের কাজ করছে। প্যাকেজিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রছাত্রী সেগুলো হাতে কিংবা কাঁধে করে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ায় জমা রাখছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গণত্রাণ সংগ্রহের এ কর্মসূচিতে গতকালের মতো আজও শামিল হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হলে ত্রাণ সহায়তা করার জন্য শিক্ষার্থীরা টাকা তুলছেন। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের জন্য কাপড় দিতে হলগুলোতে কাপড় সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে, আয়রন করে প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাভিত্তিক সংগঠনগুলো থেকেও অর্থ সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ২০০টি স্পিডবোটে করে দুর্গত এলাকায় গেছেন বলে জানালেন আন্দোলনের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইংয়ের সদস্য আবদুল্লাহ সালেহীন। আজ দুপুরে তিনি বলেন, গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গতকাল রাতে টিএসসি থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।
গণত্রাণ সংগ্রহের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ত্রাণ সংগ্রহ, প্যাকোজিংসহ সার্বিক সহযোগিতায় ঢাবির শিক্ষার্থীদের বাইরেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তারা বলেন,শিক্ষার্থীদের এ গণত্রাণ কর্মসূচিতে নগদ টাকা, শুকনো খাবার যেমন, মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট,স্যালাইন, জামা-কাপড় ও অন্যান্য জরুরি জিনিসপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকট বিবেচনায় পানি,লাইফ জ্যাকেটও সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরুরি অবস্থায় নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ও শিশুদের বস্ত্র সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীরা বলেন, `‘ ত্রাণ সংগ্রহের পর গতকাল রাতে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষে প্যাকেজিংয়ে অংশ নেন অনেক শিক্ষার্থী। দুর্গত মানুষের জন্য ট্রাকে করে পানি, শুকনা খাবার, ওষুধ, লাইফ জ্যাকেট ও জরুরি পণ্য পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ সংগ্রহের স্বচ্ছ হিসাব রাখার ব্যাপারেও আন্দোলনের সমন্বয়কেরা সচেষ্ট। ‘
চাঁদপুর টাইমস
২৩ আগস্ট ২০২৪
এজি