মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। বৃহস্পতিবার (৬ মে) দেশটিতে আবারও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে। এ দিন ভারতে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় ২ হাজার বেশি। আর এই সময়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৯১৫ জন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুসারে, ভারতে এ নিয়ে টানা ১০ দিন ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলো। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬ জন। আর মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০ জন।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) ভারতে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৯ কোটি ৮৬ লাখ ১ হাজার ৬৯৯টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৪৯০টি নমুনা।
গতকাল ভারতে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এদিন এ রাজ্যে ৮৫৩ জন মারা গেছেন। এদিকে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও কর্নাটকে ৩০০ জনেরও বেশি করে করোনা রোগী মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণ বাড়া কেরালা ও মধ্য প্রদেশে লকডাউন জারি করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতে চলছে করোনার টিকাকরণ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৯ মানুষ টিকা পেয়েছেন। এ নিয়ে ভারতে মোট ১৬ কোটি ৪৯ লাখের বেশি টিকার ডোজ দেয়া হয়েছে। তবে টিকাকরণের গতি যে যথেষ্টই কম, তা মেনে নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে পশ্চিমবঙ্গে ১১৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ হাজার ৯৬৪ জনে। এই সময়ে ১৮ হাজার ৪৩১ জনের করোনা শনাক্ত আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬ জনে।পশ্চিমবঙ্গে করোনায় একদিনে মৃত্যু ও শনাক্তে এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।
প্রতিদিন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি নতুন আক্রান্তের জেরে ভারতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৬ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি। তবে সপ্তাহ খানেক আগে সক্রিয় রোগী বাড়ছিল এক লাখেরও বেশি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন।
এদিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দ্রুত বাড়তে থাকার পরিস্থিতিতে ‘মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে’ বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ও বিহার— পূর্ব ভারতের এই পাঁচটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ওই রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপদকালীন বৈঠকের পরই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়েছে। ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নানা ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি এতদিন ছিল কিছুটা ভাল, কিন্তু তা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ইঙ্গিত পাওয়ার পরই গত বুধবার বিকেলে পূর্বের পাঁচটি রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ‘যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ এদিকেই দিকনির্দেশ করছে যে কোভিড মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক