সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সম্প্রতি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এই অনুলিপি গ্রহণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহের পর এখন ওই রায়ের পর্যালোচনা চলছে।
পর্যালোচনা শেষে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ পিটিশন) চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করবে সরকার। আর রিভিউর আবেদন করার সময় হচ্ছে রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে সরকারকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বুধবার রাতে বলেন, ৩/৪ দিন পূর্বে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করেছি। এখন রিভিউ পিটিশন দাখিলের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। কবে রিভিউ দাখিল করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চেষ্টা চলছে, দেখি কবে করা যায়?
উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। পুনর্বহাল করা হয় সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান।
রায় ঘোষণার দু’দিন পরেই এর সার্টিফায়েড কপি নেওয়ার জন্য আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দাখিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। গত ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের দুই মাস পর সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করল রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে রায়ের অনুলিপি সংগ্রহের পূর্বেই গত ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তার কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে।
এদিকে এক মাসের ছুটি অতিবাহিত হওয়ার আগেই মঙ্গলবার ওই ছুটির মেয়াদ আরো দশদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচারপতির বিদেশ গমনের সরকারি আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি। ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশ থাকবেন প্রধান বিচারপতি। ইতোমধ্যে তিনি সস্ত্রীক তিন বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
রায়ে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্র ও সমাজ, সামরিক শাসন, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন এবং সংসদ ও বিচার বিভাগ নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ দেন। কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আমি ও আমিত্ব’-এর সংস্কৃতির। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরাও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে তাদের অভিমত তুলে ধরেন রায়ে।
এরপরই ওই রায় ও রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেওয়া পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন সরকার ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাতে যোগ দেয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলও।
এমনকি সরকার ও সরকারপন্থি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারাও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া পর্যবেক্ষণও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। তবে রায়কে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেয় বিএনপি ও তার সমর্থিত আইনজীবীরা।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১২ : ০০ পিএম, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ