নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকার একটি ভবন থেকে হ্যান্ড গ্রেনেড, অস্ত্র, গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ আটক জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ জাবেদ গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। এঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোররাত ৫টার দিকে তাকে নিয়ে অভিযানে গেলে নগরীর কুয়াইশ সড়ক সংলগ্ন অনন্যা আবাসিক এলাকায় এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছে। ভোর পৌণে ৬টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক হামিদ।
তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হয়ে জেএমবি কমান্ডার জাবেদকে ডিবি হাসপাতালে আনলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন-এস আই ইলিয়াছ, এস আই লিয়াকত, ও কনেস্টেবল ফয়সাল।’
এরআগে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার বলেন, ‘খোয়াজনগর থেকে গ্রেনেড-বিস্ফোরকসহ আটক জেএমবির সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ জাবেদের স্বীকারোক্তিতে কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিক এলাকায় অভিযানে যাই। এসময় একটি বাসা থেকে গ্রেনেড উদ্ধার করতে গেলে বিস্ফোরণে জাবেদ গুরুতর আহত হয়। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসময় আমাদের তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে।’
গতকাল সোমাবার সোমবার সন্ধ্যায় খোয়াজনগর লালমিয়া কন্ট্রাকটর সড়কের পাঁচ তলা বিশিষ্ট হাজী নুর আহমদ টাওয়ারের নিচতলার ভাড়া বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখান থেকে শক্তিশালী নয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, প্রায় ২শ’ রাউন্ড একে ২২ এর গুলি, একটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ছোরা, বিপুল পরিমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরির মেশিন ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মিরসরাই উপজেলার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাবেদ (২৬), নোয়াখালী জেলার মাহবুব (৩৫), একই জেলার সোহেল ওরফে কাজল (৩৫), চাঁদপুর উপজেলার মুমিনুল ইসলামের ছেলে মো. সুজন ওরফে বাবু (২৫) ও গাইবান্ধা জেলার মৃত আকতার হোসেনের ছেলে বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ (২৬)।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার ঘটনাস্থলে বাংলামেইলকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রথমে সোমবার সকালে নগরীর মাদারবাড়ী থেকে মাহবুব (৩৫) ও কাজলকে (৩৫) আটক করা হয়। এরপর তাদের স্বীকারোক্তিতে দুপুরে নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে সুজন ওরফে বাবু (২৫) ও বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদকে (২৬) আটক করা হয়। এরপর ফুয়াদ ও বাবুকে সাথে নিয়ে বিকেলে খোয়াজনগর এলাকার জাবেদের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেনেড-বিস্ফোরক-গুলিসহ আটক করা হয় জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান মো. জাবেদকে (২৬)।’
তিনি আরো বলেন, ‘সন্ধ্যায় যখন বাবু ও ফুয়াদকে নিয়ে জাবেদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এসময় বাড়িওয়ালার স্ত্রীর মাধ্যমে জাবেদের বাসা খোলানোর পর তার রুমে ঢুকা মাত্রই সে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড আমাদের লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে। তবে গ্রেনেডের পিন ঠিক মত না খোলায় সেটি বিস্ফোরণ হয়নি বলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। এরপর পরই তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও হ্যান্ডকাপ নিয়ে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটনোর জন্য সে গ্রেনেডের ওপর ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়। তবে আমরা কঠোরভাবে তাকে নিবৃত করি।’
জাবেদের ব্যাপারে বাবুল আক্তার বলেন, ‘চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাসিন্দা মো. জাবেদ একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সে ২০১২ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। চট্টগ্রামে সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে অস্ত্র ও বোমা তৈরির দায়িত্ব পালন করছিলেন জাবেদ। একই সঙ্গে সে জেএমবি’র আত্মঘাতি দলের সদস্যও। সাড়ে ছয় হাজার টাকায় ভাড়ার বিনিময়ে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে খোয়াজনগরের হাজী নুর আহম্মদ টাওয়ারের নিচতলার তিনটি রুম ভাড়া নেন। গত ১ অক্টোবর থেকে ওই বাসায় উঠার পর বাড়িওয়ালার স্ত্রীকে জাবেদের স্ত্রীকে আনার কথা জানালেও গত ছয় দিনেও সেটি করেনি। এরমধ্যে তাকে আটক করতে আমরা সক্ষম হই।’
সোমাবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে চোখ বেঁধে জেএমবির সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ জাবেদ, সুজন ওরফে বাবু ও বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদকে ডিবির একটি মাইক্রো বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাদের আগে থেকে আটক থাকা মাহবুব ও কাজলের সাথে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে রাখা হয়েছে না কি অন্য কোনো গোপনস্থানে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশনে যান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম শহিদুর রহমান, দেবদাস ভট্টাচার্য, উপ কমিশনার (গোয়েন্দা) কুসুম দেওয়ান, উপ কমিশনার (বিশেষ শাখা) মোয়াজ্জেম হোসেন ভ্ইূয়া।
পরে রাত ৯টার দিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এস আই সন্তোষ চাকমার নেতৃত্বে এস আই রাজেশ বড়ুয়াসহ বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নুর আহমদ টাওয়ার নামে দুই ইউনিটের পাঁচতলা ভবনের ফ্ল্যাটগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দেন। এরপর জাবেদের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা দুটি হ্যান্ড গ্রেনেডের নিরাপদ বিস্ফোরণ ঘটান। এছাড়া অবিস্ফোরিত ৭টি গ্রেনেড নিরাপদে নিস্ক্রিয় করেন বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা ।
এ অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘটনাস্থল যাওয়া নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেনেডসহ পাঁচজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের পর তাদের সাথে জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা বলা যাবে। তবে সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, সদরঘাটের বাংলাবাজার এলাকায় ঈদের আগের দিন ককটেল হামলা করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার যে দু’জন ছিনতাইকারী মারা যায় তার সূত্র ধরে ডিবি এ অভিযান চালায়।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১২:৪১ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ/২০১৫।