চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শত বছরের পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ। শত বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি ফরিদগঞ্জের উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জনপদে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
মাধ্যমিক শ্রেণিতে ধারাবাহিক সাফল্য ও উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পথ সহজ করতে ২০১৪ সালে এই স্কুলে নতুন করে কলেজ শাখা কার্যক্রম চালু করা হয়।
কলেজ শাখায় প্রথম বছরে অর্ধশত শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করলেও তিন বছরের মাথায় কলেজ শাখায় শিক্ষার্থী প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা শিক্ষার্থীদের পাসের হারও ছিলো প্রায় শতভাগ।
প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার আগামির পথ চলা নিয়ে সমগ্র উত্তারঞ্চেলর স্বপ্নবাজ মানুষ আশান্বিত।
শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার প্রসারে মূল কান্ডারির ভূমিকা পালন করবে। প্রতিযোগীতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাবে সবার আগে। এদিকে এগিয়ে চলার পথে প্রশাসনিক দিক থেকে আরেক দাফ এগিয়েছে শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ।
গত ৭ নভেম্বর শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। যার নং অধ্যক্ষ-১, ০৭-১১- ২০১৬, তারিখ ১০/৩৫/৯৫/ কোড ৩৪৮৪।
স্কুলে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শোল্লা বাজার সংলগ্ন স্থানে ১৯১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানায়, ফরিদগঞ্জের উত্তরাঞ্চলে একাধিক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মানসম্মত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব ছিলো। শিক্ষার্থীরা দূর-দুরান্তে ছুটে যাচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া আশায়। আর সেই অভাব বোধ থেকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মো. নাছিরুল ইসলাম চৌধুরী (জুয়েল) ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক মো. আরিফ ছিদ্দিকী মাসুদ ভুঁইয়া শোল্লা স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
যেই কথা, সেই কাজ। এই বিদু্যুৎসাহী দুই ব্যক্তিসহ এলাকার শিক্ষানুরাগী সচেতন জনগনের আন্তরিক সহযোগিতায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্বলিত শিক্ষাক্রম নিয়ে ২০১৪ সালে শুরু হয় শোল্লা স্কুলে কলেজ শাখার কার্যক্রম।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রথম বছর ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় একাদশ শ্রেণীতে মাত্র ৫৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ফাইনাল পরীক্ষায় প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে কলেজে খোলা হয় বিজ্ঞান বিভাগ। ওই বছর ভর্তি হয় ৮৩ জন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে পূর্বের দু’টি বিভাগের সাথে যোগ হয় মানবিক বিভাগ। এবং ভর্তি হয় ১’শ ৮০ জন শিক্ষার্থী।
কলেজের অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) আরিফুর রহমান বিএসসি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বর্তমানে কলেজে পাঠদানের জন্য অর্নাস ও মাস্টার্স পাস ১৭ জন শিক্ষক রয়েছে। ইংরেজী বিষয়ে ৩ জন ও বাণিজ্য বিভাগে ৪ জন করে শিক্ষক রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি সু-পরিসর বিজ্ঞানাগার। যেখানে রয়েছে ব্যবহারিক শিক্ষার নানাবিদ উপকরণ। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানগারে অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান লাভ করতে পারে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে লক্ষ্যে কলেজে রয়েছে ওয়াই-ফাই সুবিধা সম্বলিত একটি কম্পিউটার ল্যাব। যেখানে রয়েছে অনেকগুলো ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের সমাহার। কম্পিউটার শিক্ষার জন্য কলেজে রয়েছে সু-দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী। বই পড়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য রয়েছে সু-স্বজিত চমৎকার একটি পাঠাগার। পাঠাগারে দেশি-বিদেশি লেখকদের অসংখ্য বইয়ের সমাহার রয়েছে।
পাঠাগারের ভিতরে থাকা বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিদের ফটোগ্রাফি সবার দৃষ্টি কাড়ে। শিক্ষার্থীদের বিনোদন জন্য বড় স্কিনের একটি টেলিভিশনও রয়েছে।
বাংলা জাতীয় দৈনিক, ইংরেজি ও স্থানীয় পত্রিকা রাখা হয় পাঠাগারে। এছাড় বিদুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করণের জন্য রয়েছে ৮ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জেনারেটর ও সৌর বিদুৎতের সু-ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
কলেজ শাখার কো-অডিনেটর আল মামুন মিঠু চাঁদপুর টাইমসকে জানান, প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবং পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে ফলাফল বিবরণী পৌঁছে যায়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সর্ম্পকে অবগত করার জন্য নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর
পড়ালেখার তদারকি করা হয়। সঠিক সময়ে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা, আধুনিক প্রযুক্তি সর্ম্পন্ন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি নির্ধারিত সকল জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
তিনি আরো জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্মীয় বিষয় যথাযথভাবে অনুসরন করা হয়। ছেলেদের নামাজ আদায়ের স্থানের পাশাপাশি মেয়েদের নামাজ আদায়ের ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর এসকল কিছুৃই সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মো. নাছিরুল
ইসলাম চৌধুরী জুয়েল ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক মো. আরিফ ছিদ্দিকী মাসুদ ভুঁইয়ার সদিচ্ছা ও আন্তরিক সহযোগীতার কারণে।
প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তৎকালীন শোল্লা চৌধুরী বাড়ির বিদ্যুৎসাহী জমিদার মরহুম আব্দুল ছমেদ চৌধুরী, নোয়াব আলী চৌধুরী, ইউছুফ আলী চৌধুরী ও মুহাম্মদ হানিফ চৌধুরী গং বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার জন্য ৪৭ শতাংশ জমি দান করেন। ১৯১৫ সালেপ্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি সময়ের শ্রোতে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের প্রভাবে বিভিন্ন নামে পরিচিতি ফেলেও বর্তমানে শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ নামে সর্বজন পরিচিত।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০০ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ