‘আমগো জীবন শেষ—কোনোরকম সংসার চালাইতাম। জায়গা-জমি বেচি ছেলেরে বিদাশ দিছিলাম। আইজ আট বছর অইছে। অনও চালান (মূল টাকা) উডাইতে হারিনো। অন আর ছেলেই শ্যাষ। কেমনে সংসার চালামু, কেমনে কিরমু। কান্না ছাড়া আঙ্গো আর কোনো উপায় নাই। আঙ্গো সব শেষ অই গেছে’।
ঘূর্ণিঝড়ে ওমানে ছেলে আমজাদ হোসেন হৃদয়ের মৃত্যুর খবরে কান্না থামছে না তার বৃদ্ধ বাবা আবদুস শহিদের। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছেন তিনি। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হৃদয়ের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা শহিদের সঙ্গে। এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন।
জানা গেছে, ওমানে ঘূর্ণিঝড় শাহিনের আঘাতে বাংলাদেশি শামছুল ইসলাম (৫৪), জিল্লাল হোসেন (৪৫) ও আমজাদ হোসেন হৃদয় (২৮) নিহত হয়েছেন। তারা লক্ষ্মীপুরের পার্বতীনগর ইউনিয়নের পার্বতীনগর গ্রামের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার (৬ অক্টোবর) নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করে ওমান পুলিশ।
ওমানে নিহতদের মধ্যে শামছুল ইসলাম পার্বতীনগর গ্রামের চেরাঙ্গ বাড়ির নুরুল আমিনের ছেলে, জিল্লাল একই গ্রামের কাজী বাড়ির শুক্কুর উল্যার ছেলে ও আমজাদ হোসেন হৃদয় মাঝিবাড়ির আবদুস শহিদের ছেলে। তাদের মধ্যে শামছুল ও জিল্লাল সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহতরা ওমানের সাহামে উম্মে ওয়াদি লেবানে খেজুরের বাগানে কাজ করতেন। গত ৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় শাহিনের প্রভাবে ওমানে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাতে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ১০ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস তৈরি হয়।
ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। ঝড় শুরুর পরও তারা বাইরে ছিল। এসময় জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে পড়েন তারা। স্রোতে ভেসে যাওয়ায় তাদের কোনো খোঁজ মিলছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।
নিহতদের মধ্যে শামছুল ইসলাম প্রায় ৩০ বছর ওমানে চাকরি করেছেন। পরিবারে তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। জিল্লাল ১৫ বছর ওমানে রয়েছেন। তার পরিবারে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। এছাড়া আমজাদ হোসেন হৃদয় আগে বছর আগে ওমানে যান।
নিহতরা তাদের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র ভরসা ছিলেন। তাদের মৃত্যুর খবরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘নিহতরা তাদের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র ভরসা ছিলেন। তাদের মৃত্যু খবর দুঃখজনক। নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মরদেহ দেশে আনার জন্য চেষ্টা চলছে।’
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পরিবার ও ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি অবগত করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিহতদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। নিহতদের পরিবারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আর্থিক অনুদানও দেওয়া হবে।’