Home / উপজেলা সংবাদ / শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে মতলব উত্তরের ঈদের বাজার
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে মতলব উত্তরের ঈদের বাজার

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে মতলব উত্তরের ঈদের বাজার

মো. কামাল হোসেন খান, মতলব (চাঁদপুর) :

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় খুশির দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঈদ বাজার। রেডিমেড পোশাক, শাড়ির দোকান, দর্জিবাড়ি, জুতার দোকান, পাঞ্জাবির দোকান, ছিট কাপড়, প্রসাধনী সবখানেই ভিড়। সব বয়সের মানুষের যেন মেলা বসেছে। ছুটছে সবাই নানান পসরায় সাজানো দোকানগুলোতে। শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটের বিপণিবিতানগুলো।

সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পছন্দের জিনিস কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল ও হিন্দি ছবির নায়ক নায়িকাদের নামধারী হরেক রকমের পোশাক বাজার দখল করে রেখেছে। এছাড়া ভারতীয় শাড়িতে সয়লাব হয়ে পড়েছে বস্ত্র বিপণিবিতানগুলোতে।

ঈদকে সামনে রেখে মতলব উত্তর উপজেলায় ধনী-গরিব, মধ্যবিত্ত এমনকি ছিন্নমূল পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে ঈদের কেনাকাটার আয়োজন। বিশেষ করে শিশু, কিশোরদের বায়না পূরণের জন্য মা বাবাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার এবং মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। ১০ রমজানের পর থেকে উপজেলার অভিজাত বস্ত্র বিপনী বিতান থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত সর্বত্র ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে। ক্রেতাদের ভিড়ে অধিকাংশ মার্কেটে এখন হাটাচলা করাই দায়। পরিবারের গৃহিনীসহ ছোট বড় ছেলে মেয়েও নিজ নিজ পছন্দের জামা কাপড় কিনতে মার্কেটে আসছে। থ্রি পিচ এবং প্রসাধনীর দোকানে বেশি ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দোকানীরাও মালামালে নতুন চালান এনে দোকান সাজিয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং সন্ধ্যার পর বেশির ভাগ ক্রেতা কেনাকাটা করতে দোকানে আসেন। প্রতিবারের মতো এবারও মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারের সৌদি প্লাজা, দর্জি প্লাজা, মদিনা মার্কেট, ভূঁইয়া মার্কেট, ওহাব ম্যানসন মার্কেট, হাজি সুপার মার্কেট,কলেজ সুপার মাকেট, হাইস্কুল রোড মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট রকমারি সাঝে সাজানো হয়েছে। সরকারি আধা সরকারি অফিসগুলোতে বোনাস দেয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরও কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ঈদের বাজারে সামর্থ অনুযায়ী কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন মার্কেট, বিপণি বিতান ও শপিংমলগুলোতে ভিড় করছেন লোকজন।

বিপনী বিতানগুলো সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জায়, বর্ণিল সাজে। এবারের ঈদ বাজারে দেশীয় পোষাকের পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা চ্যানেল স্টার জলসার কিরণমালাও পাখিসহ বিভিন্ন রকমারি নামের বৈচিত্র বাহারি পোষাকের রয়েছে তরুণ তরুণীদের চাহিদা। উপজেলার প্রধান প্রধান বিপণি বিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে শরু হয়েছে কেনা কাটার ধুম। ঈদের আমেজ পড়ছে বিত্তবান থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝেও।

রোববার (১২ জুলাই) মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার নিশ্চিন্তপুর বাজার, কালিপুর বাজার, কালির বাজার, আন্দ বাজর (নতুন বাজার), মোহনপুর-মুদাফর বাজার, সুজাতপুর বাজার, নন্দলালপুর বাজার, এখলাছপুর বাজার, বাগানবাড়ী, সটাকী বাজার,সাহেব বাজারসহ উল্লেখযোগ্য পোষাক ও কাপড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ সকল দোকানের অধিকাংশ ক্রেতাই বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। বাজারে কেনাকাটায় ছেলেদের জিন্স প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, সর্ট-শার্ট, ফতুয়া এবং মেয়েদেও ল্যাহেঙ্গা, জিপসি, পাকিস্তানি থ্রি পিস, ভারতীয় থ্রি পিস ও দেশীয় থ্রি পিসের ক্রেতার সংখ্যা বেশি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদের কাপড়ের দাম অনেক বেশি। দোকানিরা ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে নিত্য নতুন বাহারি রংয়ের পোষাক তুলছেন তাদের দোকানগুলোতে। কাপড়পট্টির কাপড়ালয়সহ বিভিন্ন দোকানে হরেক রঙের শাড়ি কাপড় ও থান কাপড় সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। ওই সকল দোকানে গৃহিণীরা ভিড় করছে তাদের চাহিদা মত শাড়ি কাপড় কেনার জন্য। এবার ভালো মানের শাড়ি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, ল্যাহেঙ্গা ২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা, লাসা ১২০০ থেকে ৭ হাজার টাকা, পাকিস্তানি থ্র্রি পিস সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা, পাঞ্জাবি ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, সাধারণ প্যান্ট ৫০০ টাকা থেকে দামি ৩ হাজার টাকা, ফতুয়া আড়াইশ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, বিভিন্ন ধরনের শার্ট ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, জুতা ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা ও বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাক ৫০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত দরে পাওয়া যাচ্ছে।

ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। কম দামে কেনাকাটা করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকজনের ভিড় দেখা যায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে। এ সকল দোকানের অধিকাংশ ক্রেতাই দিন মজুর, শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের লোকজন। ছোটদের থেকে শুরু করে বড়দের পর্যন্ত পোশাক দেড় ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে এবার সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে শিশুদের জামা কাপড় কেনায়।

উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারের মদিনা মার্কেটের ন্যাশনাল ফ্যাসন হাউজের প্রোঃ মোঃ জুয়েল বলেন, ঢাকাই মসলিন, চিত্রা, বুটিক, বালুচুরি, কাতান, জামদানিসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি তার দোকানে রয়েছে। সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০-২৫ হাজার টাকা দামে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনা ভাল। তবে কেনার ওপর দাম নির্ভর করছে। ১৫ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় পড়েছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী ছেলেমেয়ের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার বেচাকেনাও বেশি। তরুণীদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় টিভি নাটক ও চলচিত্রের নামে নাম কিরোন মালা, বজ্রমালা, ইশান, পাখি, টাপুর-টুপুর, ঝিলিকসহ বিভিন্ন নামের পোশাক।

উপজেলার দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানালেন, সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি থ্রিপিস কিনেছি। এছাড়া আমার তিন সন্তানের জন্য সার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি কেনাকাট করেছি। ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতাও কেনা হয়েছে। তবে অন্যন্য বারের চাইতে দাম একটু বেশি। আমার বড় ছেলের জন্য ২০০০ টাকা দিয়ে পাঞ্জবি ও ১০০০ টাকা জুতা কিনেছি। দাম একটু বেশি হলেও ছেলের ইচ্ছা বলে কথা।

ছেংগারচর পৌর বাজারে মার্কেট করতে আসা নিশ্চিন্তপুর কলেজের প্রভাষক মাহমুদা আক্তার জানালেন, এবার ঈদে শাড়ি কাপড় থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম একটু বেশি। তবে কিছুই করার নেই ঈদ বলে কথা। আমার জন্য এবং মা, শাশুড়ি, স্বামী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেছি।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, ২৭ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, রোববার ১২ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি