ফরিদগঞ্জ

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সরগরম ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা

৪র্থ দফায় পৌর নির্বাচন তফসিল ঘোষিত ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাকি। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের প্রচারনায় সরগরম পৌরসভা এলাকা ।

১৯.৭৫ বর্গ কি. মি. ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ২০টি গ্রামে নিয়ে গঠিত এখানে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১৫ হাজার ৯শত ৩৪ জন, মহিলা ভোটার রয়েছে ১৫ হাজার ১শত ৫০জন, মোট ভোটার সংখ্যা ৩১হাজার ৮৪জন।

পৌর এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারনায় সরগরম থাকলেও সাধারন ভোটারদের মধ্যে নেই যেন স্বস্তি, নেই কোন উৎসাহ। চায়ের দোকানগুলিতে থাকেনা ভোটারদের ভীড়। চায়ের কাপে চুমুকের সাথে নির্বাচনী খোশগপ্প মোটেই শুনা যায় না।

নৌকা, ধানের শীষ ও হাত পাখার মোট তিনজন মেয়র প্রার্থী এবং ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৬৪ জন কাউন্সিলর সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১১জনসহ সর্বমোট ৭৮ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছে।

এই পৌর নির্বাচনের ভালো দিক হচ্ছে প্রতিটি ওয়ার্ডেই কিছু সংখ্যক শিক্ষিত এবং ভদ্র কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন । যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্ব বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।

তবে, প্রভাবশালী নেতারা দলীয় একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। নিজেদের আধিপত্য জাহির করতে কে কতজন আস্থাভাজন কাউন্সিলর নির্বাচীত করবেন তা নিয়ে মনস্তাত্বিক লড়াই চলছে। বিষয়টি নিয়ে নিতিনির্ধারকরা একাধিক বেঠক এবং বিভিন্নভাবে হুশিয়ারি উচ্চারনের পরও সমাধান হয়নি। অনেকেরই শঙ্কা কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রগুলিতে হানাহানী হতে পারে।

ইতি মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় ১৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি ভোট কেন্দ্রই ঝুকিপূর্ন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়েছে বলে চাঁদপুরে নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় তিনি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পক্ষে নির্বাচনের মনোনয়ন জমাদানের তারিখ থেকে শুরু করে অদ্যাবদী কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলার বহু নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারীর নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে নিয়মিত মিছিল, সমাবেশ, উঠান বৈঠকের মতো কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছেন। পৌর আ,লীগ অংগসংগঠনের সাথে থেমে নেই জেলা, উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ ও হকার্সলীগ। বিগত প্রায় সকল নির্বাচনেই দলীয় কোন্দল দেখা গেলেও এবারই দলীয় বিভেদকে ভূলে সকলে একই মঞ্চ থেকে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিটি দলীয় এবং নির্বাচনী সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য হলো জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রবীন নেতা জনাব খায়ের পাটওয়ারীকে মনোনয়ন দিয়ে সম্মান দিয়েছেন। ফরিদগঞ্জবাসীরও উচিত উনাকে নির্বাচিত করে জননেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান দেয়া। পৌরসভা এবং পৌরবাসীর ভাগ্য উন্নোয়নে, আধূনিক পৌরসভা গঠনে, জাতীর পিতার সোনারবাংলা গড়তে ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা মার্কার বিজয় অতীব জরুরী।

অন্যদিকে বয়সে একবারেই নবীন সাবেক মেয়র মঞ্জিল হোসেনের ছোটভাই, পৌর যুবদলের দলের আহবায়ক মো. ইমাম হোসেনের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল বিএনপি’র বিবাদমান অন্যান্য গ্রুপসহ কেন্দ্রিয় বা জেলা পর্যায়ের কোন নেতাকর্মীকে নির্বাচনী বিষয়ে তৎপর হতে দেখা যায়নি। বরং প্রবীন এবং যোগ্য নেতাদের উপেক্ষা করে প্রার্থী দেয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জেলা ও উপজেলার বিএপি’র দলীয় কোন প্রবীন নেতাকেও নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়নি।

বরং নিজ গ্রুপের অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রার্থী এবং উনার দু একজন ভাই ব্যতীত আমরা কোনদিনই জানতে পারি না কখন কোন অঞ্চলে বা কোন এলাকায় গনসংযোগ অথবা ভোট প্রার্থনার জন্য সমাবেশ হবে।

যে কারনে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসহযোগিতার কারণে নিয়মিত প্রতিকূল পরিবেশের সম্মূখিন হচ্ছি। কেউ কেউ বলছে প্রার্থীসহ তার একান্ত আপনজনেরা চাইছিলেন ধানের শীষের মার্কাটি তাদের ঘরে আসুক। নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করে বা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন মূল লক্ষ্য নয়।

শীর্ষ তিন নেতা সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ, বর্তমান সমন্বয়ক আলহাজ্ব এম এ হান্নান ও মোতাহার হোসেন পাটওয়ারীসহ তাদের অনুসারীরা মাঠে নেই।

নির্বাচনে উভয় পক্ষই অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে কিছু অনিয়ম আর হয়রানির কথা উল্লেখ করেছে। তবে এটি সত্যি যে প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং ছোটখাট দু একটি ঘটনা ব্যতীত পূর্বের তুলনায় স্বহিংস একবারেই নেই বললে চলে। ইতিমধ্যে মেজিষ্ট্রেট ও প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তার জন্য সরকারী পর্যায়ে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে বেশ তৎপর।

নিবার্চনের বিষয়ে রির্টানিং অফিসার শিউলি হরি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, যে কোন অভিযোগ পাওয়ামাত্রই আমরা প্রয়োজনীয় এবং নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহন করি। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারী ভোটারগন যেন নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করতে পারে সে ব্যপারে প্রশাসন সজাগ রয়েছে।

নির্বাচনী বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানএড. জাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, আমি ফরিদগঞ্জের জনগনের প্রতিনিধি। দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কোন ভুল করেনি, বিএনপি’র প্রার্থী বিবেচনায় চরম ভুল এবং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মেয়রের চেয়ারের জন্য যোগ্য প্রার্থী বিবেচনা করতে হয়। এর মুল্য অনেকেই দিতে জানে না। ফরিদগঞ্জপৌরবাসী সঠিক এবং যোগ্য প্রার্থীকেই মূল্যায়ন করবে।

বিএনপি’র প্রার্থী ইমাম হোসেনের ভাই সাবেক মেয়র মঞ্জিল হোসেন বলেন, আমরা নিজেরাই নিরাপদ না। আমাদের প্রচার কার্য চালাতে গিয়ে বিনা উস্কানিতে বাধাপ্রাপ্ত এবং হুমকি ধমকির সম্মুখিন হচ্ছি প্রতিনিয়ত। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছেনা, আমরা পৌরসভার বাহিরের, জেলা ও কেন্দ্রিয় কোন নেতা-কর্মীদের আমদের সাথে রাখছিনা। এ ছাড়াও ইতিমধ্যে কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশি হয়রানি শুরু হয়ে গেছে।

পৌর এলাকর ভোটার রিক্সাচালকরা বলেন, আমার ভোটে কেউ জিতেও না, না দিলে কেউ হারেও না, গত কয়েক নিবার্চন ধরে কেউ ভোট দিতে বলেও না, চায়ও না। তাই কেন্দ্রেও যাই না। নির্বাচনের দিন ক্ষেপ মারতে মারতে নিজের ভোট দেওনের সময়ও পাই না।

কাছিয়াড়া গ্রামের দিনমজুর নুরু জানায়, গত দুইবারই সারাদিন নষ্ট কইরা বুথে ঢুকার পর শুনি আমার ভোট না কি হইয়া গেছে। আরেকবার পুলিশের মাইর খাইয়া কেন্দ্র থেইকা পালাইয়া আইছি। এইবার কি হইবো জানি না।

নির্বাচনি এলাকার সাধারন মানুষের চাওয়া যেভাবেই হউক যোগ্য প্রার্থী নির্বাচীত হউক। হানাহানি, রাহাজানি বা সহিংস ঘটনা পরিহার করে সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে ভোট দিতে পারা, ভোট দিয়ে বাড়ী ফেরার ব্যবস্থা করা, দলীয় নেতাগন এবং দেশ প্রধানের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। ভালোবাসা দিবসে প্রবীন বা নবীন যে ই জয়যুক্ত হয়ে পৌরবাসী ও পৌরসভার কল্যানে কাজ করবে, পৌরবাসীকে আপন করে নেবে, সুখ দুঃখের কথা শুনবে, সাধ্যানুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে সে ই ভালোবাসায় সিক্ত হবে।

প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Share