বিনোদন

শেষ জীবনে ১ টাকা করে সাহায্য চান শিল্পী আব্দুল জব্বার

মুক্তিযোদ্ধা ও অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী আব্দুল জব্বার জটিল রোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর কিডনির অবস্থা ভালো নয়। হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসায় প্রায় কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতায় তিনি এখন সবার কাছে সাহায্য প্রার্থী।

আব্দুল জব্বারকে যারা দেখতে যাচ্ছেন তাদের কাজে তিনি বার বার সহযোগিতা চাচ্ছেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,‘শেষ জীবনে এসে আমার মত শিল্পীরা অসহায় হয়ে পড়ে। অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না। বিত্তশালীদের উচিত আমাকে সাহায্যে এগিয়ে আসা।

তাকে দেখতে যাওয়া সাংবাদিক সোহেল সানির কাছে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে আব্দুল জব্বার বলেন,”আব্দুল জব্বার যদি জাতি গঠনের সংগ্রামে গান গেয়ে গেয়ে কোনো ভুমিকা রেখেই থাকি তাহলে ষোল কোটি মানুষ এক টাকা করে আমাকে দিক । আমার চিকিৎসা হবে। আমার দেহে স্থাপিত হবে দু’টি কিডনী। তখন নিশ্চয়ই আমি বেঁচে যাবো ।’

তিনি বলেন,‘যখন লাইফ সাপোর্টে থাকব তখন অনেকে দেখতে আসবেন! মারা গেলে শহীদ মিনারে রাখা লাশে ফুল দেবেন! আমার এসব কিছুর দরকার নেই। আমি আরো কিছুদিন বাঁচতে চাই। আর এজন্য আমার কিছু টাকা দরকার। কিছু টাকা দিয়ে আমায় সহযোগিতা করুন।’

আবদুল জব্বার বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার চিকিৎসাবাবদ ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। বেশ ক’জন বিত্তশালীও এগিয়ে এসেছেন। এখনও বাকি মোটা অঙ্কের টাকা।কীভাবে জোগাড় হবে জানি না।’

তিনি বলেন,‘যে যা টাকা দিচ্ছে,এখানে চিকিৎসা করাতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই বলা কঠিন কত টাকা হলে আমার চিকিৎসা শেষ হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা.কামরুল হাসান খান শিল্পীর অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান,‘শিল্পী আবদুল জব্বার ক্রনিক কিডনিজ ডিজিস স্পেস ফোরে ভুগছেন। এছাড়া তার লিভারে সমস্যাও রয়েছে।’

তিনি বর্তমানে নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা.শহীদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখনও তাকে মুখে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আপাতত তার ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত,আবদুল জব্বার একজন বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত “সালাম সালাম হাজার সালাম”,”জয় বাংলা বাংলার জয়”সহ এরকম বহু উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তার গাওয়া “তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়”,”সালাম সালাম হাজার সালাম”ও”জয় বাংলা বাংলার জয়”গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত লাভ করেছে। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দু’টি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

যুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধুদ্ধ করেছেন। সে দুঃসময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এ শিল্পীর গাওয়া বিভিন্ন গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে । তিনি স্বাধীনতা পদক,একুশে পদকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদক অর্জন করেছেন।

১৯৭১ সালে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যান।
‘ও..রে নীল দরিয়া’,‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’,‘সালাম সালাম হাজার সালাম’,‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ও ‘পিচ ঢালা এই পথটাকে ভালোবেসেছি’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন শিল্পী আব্দুল জব্বার।

জব্বার ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৯৬২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হয়ে উঠেন।

১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র সংগম-এর গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া “তুমি কি দেখেছ কভু” গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৬৮ সালে পীচ ঢালা পথ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে “পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি”এবং ঢেউয়ের পর ঢেউছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে “সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো”গানে কণ্ঠ দেন।

তার একটি কালজয়ী গান ১৯৭৮ সালের সারেং বৌ ছবির আলম খানের সুরে “ও..রে নীল দরিয়া”।

২০১৭ সালে মুক্তি পায় দেশবরেণ্য এ সঙ্গীত শিল্পীর প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম কোথায় আমার নীল দরিয়া। অ্যালবামটির গীতিকার মো.আমিরুল ইসলাম ও সুরকার গোলাম সারোয়ার।(নয়াদিগন্ত)

নিউজ ডেস্ক
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৭:৩৫ পিএম,৭ আগস্ট ২০১৭,সোমবার
এজি

Share