টানা প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী চার উপজেলার কমপক্ষে ২০টি ইউনিয়নের ১২২ গ্রামে আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। এরই মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৫ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকজন। নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন, খলিসাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী(৭১)। বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের রমিজা বেগম(৪০)। অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিন দুই ছেলে আবু হাতেম(৩০), আলমগীর হোসেন(১৭)। নামাবাতকুচি গ্রামের স্বামী আব্দুল হাকিম স্ত্রী জহুরা খাতুন(৪৫)।
মো. মাসুদ রানা নালিতাবাড়ীর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের কাজ চলছে।
ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা প্রবল পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ঢলের পানি ভাটির দিকে নামতে থাকায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে ঢলের পানি ঢুকেছে নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও। ওই চার উপজেলার ২০ ইউনিয়নের অন্তত ১২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার ও নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারি বর্ষণের ফলে তেমন উন্নতি হচ্ছে না। অন্যদিকে নদীর পানি ভাটি অঞ্চলে গিয়ে বন্যার তীব্রতা বাড়িয়েছে।
শনিবার রাত থেকে প্লবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়। নালিতাবাড়ী-শেরপুর মহাসড়কের রানীগাঁও এলাকায় মহাসড়কের বড় ধরনে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ, কারও গবাদি পশু, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনের খেত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাকিবুজ্জামান খান জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভোগাই, চেল্লাখালী এবং মহর্ষি নদীর বেশ কয়েকটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।
এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান শনিবার সকালে বলেন, পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের জন্য ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা এবং উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছা সেবীরা কাজ করছে। (ইত্তেফাক)
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur