১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মবার্ষিকী।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল। তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা রেখে ও স্মরণ করে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করলাম । চাঁদপুরের সকল উপজেলায় ২শ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্থাপিত হয়েছে আরো ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০টি ডিজিটাল ক্লামরুম।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এ তথ্য জানা গেছে। পাশাপাশি প্রতিটি ল্যাবে কমপক্ষে ১৭ টি ল্যাপটপ, ১টি এলইডি স্মার্ট টিভি,ওয়েব ক্যামেরা,প্রিন্টার,ল্যান কানেকশন সেটিং মাল্টিপ্লাগ,রাউটার,ব্যাগ,স্ক্যানারসহ ২৩টি আইসিটি সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারা সাপ্তাহিক শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রশিক্ষণ প্রদান করার নির্দেশনা রয়েছে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তাগণ শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাবের কার্যক্রম তদারকি করছেন বলে জানা গেছে । তবে এ সব ল্যাব পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আইসিটিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন বলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অভিমত ।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ শিক্ষার সকল স্তরে আইসিটি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আইসিটিতে অগ্রসর বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি ও দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রাথমিক স্তর হতেই আইসিটি শিক্ষা অর্ন্তভুক্তকরণের বিষয়টি বাস্তবসম্মত ও যুগান্তকারী একটি ধারণা ও পদক্ষেপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে।
চাঁদপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণকৃষ্ঞ দেবনাথ বলেন,‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার’। তিনি দেশ এগিয়ে নিতে আইসিটিতে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে সারাদেশের প্রথম পর্যায় ৫ হাজার ‘ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনে প্রকল্প’ গ্রহণ করেন। ঐ আলোকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপুমনির আন্তরিকতায় চাঁদপুরে ২শ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। যার কার্যক্রম নিয়মিত ভাবে চলছে। আমাদের আগামি র্স্মাট নাগরিক তৈরির প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তিসম্পন্ন জ্ঞান ও দক্ষতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনে প্রকল্পটি এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের শিক্ষার্থীগণ এ ল্যাব থেকে কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে। ’
হাজীগঞ্জ উপজেলা একাডেমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুনির্মল দেওরী বলেন,‘ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত এটি। শিক্ষার্থীগণ তথ্য ও প্রযুক্তিতে জ্ঞান অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবগুলো অসামান্য অবদান রেখে চলছে। কম্পিউটার পরিচালনা,মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ,অনলাইন ক্লাশ ও এর বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কাজ এবং এর দক্ষতা বাড়াতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান অর্জনে ল্যাবগুলো ভ’মিকা রাখছে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধীন ‘সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে জানুয়ারি, ২০১৫ জুন হতে ২০১৯ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ১টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন,সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি বিদ্যালয়সমূহে ১৫টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। চাঁদপুরে সেই আলোকে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপুমনি‘র ঐকান্তিক প্রচেস্টায় চাঁদপুরে প্রায় ২শ টির মত শিক্ষা প্রতিস্ঠানে এ প্রকপ্লের কাজ চলমান রয়েছে। এ সকল ল্যাব স্থাপনের ফলে চাঁদপুরের শিক্ষা এবং আইসিটি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহার এবং আইসিটি শিক্ষায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও এ সব ল্যাবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মকাণ্ড সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব ।এ সুফল ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীগণ পেতে শুরু করেছে ।
সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় (পাইলট) পর্যায়ে ১৬০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপিত হয়েছে। এ সকল ডিজিটাল ল্যাব তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মকে আইটি পারদর্শী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে সারাদেশে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে । শিক্ষার উন্নয়ন,আইসিটির বিস্তার, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্থানীয় পর্যায়ে আইসিটি ক্লাব স্থাপন ইত্যাদির নিমিত্ত পর্যায়ক্রমে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা জরুরি। শিক্ষাক্ষেত্রে সারা বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ তাদের সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করছে।
গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষের ধারণা থেকে বের হয়ে এসে এখন প্রবর্তিত হয়েছে স্মার্ট ক্লাসরুমের ধারণা। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের দেশেও প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার,ডিজিটাল কনটেন্ট,সফটওয়্যার, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি সম্বলিত স্মার্ট ক্লাসরুমের প্রবর্তনের মাধ্যমে স্কুল অব ফিউচার স্থাপন করা দরকার।
দ্বিতীয় পর্বে নতুন করে পাঁচ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এর আগে চর্তুথ শিল্পবিপ্লব বাস্তবায়নে সারাদেশে আট হাজার ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব’ গড়ে তোলা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস, ব্লকচেইন, বিগ ডাটার মতো নতুন নতুন প্রযুক্তি পৃথিবীকে দ্রুত বদলে দেবে। ডিজিটাল ল্যাব তরুণ প্রজন্মকে প্রোগ্রামিং শেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র :ওয়েবসাইড ও জেলা তথ্য বিভাগ, চাঁদপুর ।
লেখক : আবদুল গনি, শিক্ষক,প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক,বাংলাদেশ পোস্ট ও চাঁদপুর টাইমস,চাঁদপুর । অক্টোবর ১৮ , ২০২৩ ।