প্রেমের শুরুটা করেছিল যৌবনে উপনীত হওয়ার আগেই। প্রেমের নেশায় মগ্ন যখন কিশোরী। প্রেমে মত্ত হয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে গিয়ে পারিবারিক সম্মান কিংবা নিজের ইজ্জতের সামাণ্য মূল্যও তখন একেবারে তুচ্ছ।
আপনি নজর রাখছেন তো আপনার আদরের কিশোরী মেয়ে কিংবা কিশোর ছেলেটির দিকে। সে তার পড়ার ফাকে কি কাজে সময় ব্যয় করছে? তাহলে এই ঘটনাটি পড়ুন–
মিতু আহমেদের কনিষ্ঠ সন্তান রিয়া। ক্লাস টেনে পড়ছে ভালো একটা স্কুলে। পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ নেই তার। ল্যাপটপ মোবাইল ইত্যাদি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে সে। ইদানিং রিয়া অনেকক্ষন কার সাথে যেন কথা বলে। জিজ্ঞেস করলেই বলে ক্লাসের বন্ধু, পড়াশোনা নিয়ে কথা বলে।
হঠাৎ একদিন টেবিলের উপর চিঠি রেখে রিয়া বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল। চিঠিটায় লেখা ‘আমি চলে গেলাম, আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না…’ চিঠি পড়ে থ হয়ে গেলেন মিতু আহমেদ। যে ছেলেটার সাথে বেড়িয়ে গেছে রিয়া, খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ছেলেটা মাদকাসক্ত। কিছুদিন পরই রিয়াকে বাসায় ফেরত চলে আসতে হয়। অবসাদগ্রস্ত বিষণ্ণ রিয়া মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে…
এমন ঘটনা অনেক পরিবারেই ঘটে। কিশোরী বয়সে প্রেমে পড়ে অনেক মেয়েই ঘর ছাড়ে প্রেমিকের হাত ধরে। এরপর অল্প দিনেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় নতুবা মেয়েটা পড়ে যায় ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। অপরিণত বয়সে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে এভাবে বিয়ে করে ফেললে দেখা যায় মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারে না। আর বাস্তবতা তো স্বপ্নের মতো নয়। চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে তখনই দন্ধ শুরু হয়। আর কিশোরী মেয়েটাকে শুধু কষ্টই পেতে হয়।
কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নেয় কী করে একটি কিশোরী মেয়ে? পরিবারের বাইরে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কী করে? মা-বাবার সাথে সন্তানদের মানসিক দূরত্ব থাকলে অনেক সময় মা-বাবা বুঝতেই পারেন না তাদের সন্তানরা কী করে, কোথায় যায়, কাদের সাথে মেশে।
বিশেষ করে কিশোরী মেয়েদের প্রতি আলাদা নজর দিতে হবে। কারন এই বয়সেই মেয়েরা ভুল করে বসে। তাই কিশোরি সন্তানের সাথে সময় কাটান, তার কথাগুলো শোনার চেষ্টা করুন বোঝার চেষ্টা করুন। তাকেও আপনাদের কথা বলুন, তার প্রতি আপনাদের ভালোবাসার যে কমতি নেই সেটা বলতে হবে তাকে। আর তার করনীয় সম্পর্কেও তাকে গাইড করতে হবে।
অল্প বয়সে এভাবে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা আগেও ঘটত। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ফোন ইত্যাদির অত্যধিক ব্যবহার এসব ভুলে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অপরিচিত কারো সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা বা চ্যাট করা কিশোরি মেয়েদের আবেগি করে তুলছে।
এ বিষয়ে মা-বাবার একটু নজরদারি করা উচিত। এ বিষয়ে খোলামেলা ভাবেই কথা বলা উচিত সন্তানের সাথে। কার সাথে কথা বলা যাবে আর কার সাথে যাবে না, কতক্ষণ সময় দেয়া যাবে ফেসবুকে, মোবাইল কখন বন্ধ করে ঘুমাতে হবে এসব নিয়ম করে দেয়া উচিত। তবে পুরোটাই হতে হবে সুন্দর বন্ধুত্বের ভিতর দিয়ে। কোনোরকম বকাঝকা ছাড়াই সন্তানকে বুঝিয়ে সুন্দরভাবে চলতে উপদেশ দিতে হবে।
মনঃচিকিৎসক মোহিত কামালের মতে, ‘কিশোর বয়সে আবেগি প্রেমে জড়ানোর বিভিন্ন কারণের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা না পাওয়াটা অন্যতম। এমন কিশোরীরা খুব সহজেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। চোখের নেশায় মুহুর্তেই ভুলে যায় সব কিছু।
এ সময় মানসিক রোগাক্রান্তও হয়ে পড়তে পারে কেউ কেউ। পারিবারিক শিক্ষা, ভালোবাসা আর পরিমিত নিয়ন্ত্রণই পারে কিশোরীদের অল্প বয়সে প্রেম আর বিয়ের মতো সিরিয়াস বিষয় থেকে দূরে রাখতে। রাগ না করে বুঝিয়ে বলুন। অভিভাবক হয়েও বন্ধুর মতো খোলামেলা কথা বলুন তাদের সাথে।’