বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনার এই সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এই সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা এগিয়ে রয়েছি। দেশের কোথাও যেন অক্সিজেনের সঙ্কট না হয়, সে জন্যে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ইউনিসেফ এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে। অতিশিগ্রই এটি চালু হয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। আবুল খায়ের গ্রুপ চাঁদপুরসহ দেশের ১৬টি জেলায় অক্সিজেন সহায়তা দিচ্ছে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এভাবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খ্যাত এগিয়ে না আসলে এতোবড় সঙ্কট মোকাবেলা দূরুহ হয়ে যাবে। আশা করবো সকল বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সেবায় এগিয়ে আসবে।
১৬ জুলাই শুক্রবার বিকেলে তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে চাঁদপুর আড়াইশ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টের অগ্রগতি সম্পর্কে জেনে এ কথাগুলো বলেন।
এসময় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত অক্সিজেন প্লান্ট চালু হলে হাসপাতালের ১৫০ বেডে অক্সিজেন দেয়া যাবে। এছাড়া সকল উপজেলাতে সিলিন্ডার রিফিল করে সাপ্লাই দেয়া যাবে। এ জন্যে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। শুধু সদর হাসপাতালেই নয়, সকল উপজেলার হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সে বিষয়ে সিভিল সার্জন কাজ করছেন।এটি করতে পারলে সবল উপজেলায় করোনা রোগীরা আরো বেশি সেবা পাবেন। আশা করছি এ ক্ষেত্রে আমাদের জনবল সঙ্কট হবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করছে।
ডা. দীপু মনি এমপি আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে, তার কর্মী হিসেবে আমরা জনপ্রতিনিধিরা জনগণের পাশে আছি। এই করোনাকালে হাসপাতাল, ল্যাবে দায়িত্বরক সকল চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সঙ্কটকালে করোনা রুগীদের পাশে দাঁড়াতে পারছি। করোনার থাবায় আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। আর যেনো কাউকে হারাতে চাই না। এ জন্যে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামনে ঈদ, আমরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আনন্দ করি। এ আনন্দ যাতে আমাদের জন্যে বেদনার কারন হয়ে না দাঁড়ায়।
সেলিম মাহমুদ বলেন, করোনার সঙ্কট থেকে উত্তরণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভ্যাকসিনের সঙ্কট দূর হয়েছে। বর্তমানে করোনার ইন্ডিয়ান ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকেছে এবং প্রচন্ডভাবে আমাদের আক্রমণ করছে। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করলে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সে কারনে সরকার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে।
চাঁদপুরবাসী জেনে আনন্দিত হবেন যে, ডা. দীপু মনি আপা এবং আমার পরামর্শে আবুল খায়ের গ্রুপ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আবুল খায়ের গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার আবু সাঈদ চৌধুরী আমার বন্ধু। তারা সরকারকে সহায়তা করার জন্যে যে ১৬টি জেলায় অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে, সেগুলোতে অক্সিজেন ব্যাংক করেছে। চাঁদপুরে যে অক্সিজেন ব্যাংক করেছে তার মাধ্যমে সকল উপজেলায় অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারবে। তারা প্রতি ১০ মিনিটে ১টি সিলিন্ডার এবং একদিনে ১৪০টি সিলিন্ডার রিফিল করার সক্ষমতা রাখে। এছাড়াো তারা ২০০ সিলিন্ডার মজুদ রাখবে। এজন্যে আবুল খায়ের গ্রুপ এবং ইউনিসেফকে ধন্যবাদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, অ্যাড. মজিবুর রহমান ভূইয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোঁপ, শিক্ষামন্ত্রী প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন বাবু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচএম আহসান উল্লাহ, চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে আরএমও ডাক্তার সিরাজউদ্দৌলা রুবেল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড ন্যাশন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এর অর্থায়নে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শুরু করা হয় গত ২ মাস আগে। যা বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। হাসপাতালের উত্তর পাশের খালি জায়গাটিতে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলিলিটারের প্ল্যান্টের অক্সিজেন সংরক্ষণের ট্যাংকি, সেবা কার্যক্রমের ভবনসহ সকল কাজও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটি থেকে প্রায় দেড়শ’ আউটলেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলিলিটারের লিকুইড অক্সিজেন গ্যাসে রুপান্তর করা হবে। যার মাধ্যমে একসাথে ১শ’ ৫০ জন রুগীকে অক্সিজেন সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
বর্তমানে কুমিল্লা থেকে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন এনে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। চাঁদপুরে এই প্লান্ট চালু হলে আমাদের জেলার বর্তমান চাহিদা পূরণ করে আরো চার-পাঁচ মাসের অক্সিজেন মজুদ রাখা যাবে। এছাড়া এখান থেকে অন্য জেলায় অক্সিজেন সরবরাহও করা সম্ভব হবে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম, ১৬ জুলাই ২০২১