করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে এম্বুলেন্সেই মারা গেছেন চিত্রশিল্পী মনির হোসেন। এমনটিই দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে মৃত মনিরের ছেলে এবং স্ত্রীর কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ৪৮ বছর বয়সী মনিরের ছোট ভাই সাব্বির মানবজমিনকে বলেন, গত সোমবার গোপালগঞ্জ থেকে সকাল ৮টায় কুর্মিটোলা হাসপাতালে আসি ভাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে। আমার ভাই একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলে ছবি একে সারা দেশে প্রথম হন। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে গোল্ড মেডেলও অর্জন করেন। সোমবার রাত ১০টায় ওনার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
মধ্যরাতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার টাইফয়েড, ডেঙ্গু, করোনাসহ যাবতীয় পরীক্ষা করানো হয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পাইনি। অন্যান্য রিপোর্টে তার শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সমস্যা দেখা গেছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়, তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও কুর্মিটোলা হাসপাতালে আইসিইউ খালি না পেয়ে সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। আইসিইউ’র বেড খালি না থাকলে আমরা অন্যত্র নিয়ে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঢামেকের সামনের গলিতে বসে হাহাকার করেছি। চিকিৎসককে বারবার বলেছি, স্যার আগে অন্তত রোগীকে দেখেন। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে পর ভর্তি নিলেও একজন চিকিৎসকও ভাইকে দেখতে আসেননি। অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই ভর্তি নিলেও এতো কেঁদেছি, অনুনয় করেছি। কিন্তু আমাদের মানুষ বলেই মূল্যায়ন করেনি।
কেউ এসে একবারও দেখেনি সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। তারাতো কাছে এসে দেখেননি। গাড়িতে ভাই ছটফট করতে থাকে তখনো আসেনি। মারা যাওয়ার পর একজন এসে ইসিজি করে জানায় যে, আপনার ভাই নেই। তখনো ডাক্তার আসেনি। খিলক্ষেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অরণ্য ক্রপ কেয়ার লিমিটেডে মনির দীর্ঘ ১৮ বছর চিত্রকর্মের কাজ (চাকরি) করেছেন। করোনার প্রভাবে সম্প্রতি তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দেয়া হয়।
মনিরের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায়। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মৃত মনিরের ছেলে সাগর বলেন, আব্বুর গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ছিল। কাশি, গলাব্যথা ছিল। খাওয়া-দাওয়া করতে পারতেন না। গতকাল বিকালে আব্বু খাবার খেয়েছেন। সন্ধ্যায় তার খেতে খুব কষ্ট হয়েছে। রাত ১২টায় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক চেষ্টা করেও এম্বুলেন্স পাইনি। পরবর্তীতে একটি এম্বুলেন্স পেলেও অক্সিজেনের মাস্ক ছিল না। কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানেও ঠিকমতো অক্সিজেন পাওয়া যায়নি। ঢামেকে বাবাকে নিয়ে গেলেও তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এই বিচার আমরা কার কাছে দেবো?
ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur