শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির দামে আগুন

শীতের সবজি বাজারে আসার পর সাধারণত দাম কমে; কিন্তু এবার শীতের ভরা মৌসুমেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম চড়া। মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, চিচিঙ্গা, বেগুনসহ নিত্যদিনের সব সবজির দামই বাড়ছে। এ অবস্থায় ‘সীমিত’ বাজার করছেন মধ্য আয়ের মানুষেরা। এদিকে নিম্ন আয়ের অনেক ক্রেতা ঝুঁকছেন কুড়িয়ে পাওয়া সবজি বিক্রেতাদের দিকে।

বাজার ঘুরে দেখে গেছে, কয়েক দিন আগেও যে টমেটো ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল সেটি এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। সেই ফুলকপি এখন আকার ভেদে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কিছুদিন আগেও শসা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়, এখন তা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকা কেজির শিমের দাম ঠেকেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

মধ্য আয়ের মানুষেরা কমবেশি বাজার করতে পারলেও বিপাকে পড়েছেন শহরের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। পরিবারের প্রতিদিনের তিন বেলা খাবার জোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। পাইকারি দামেও সবজি কিনতে পারছেন না অনেকে। তাঁদের অনেকে ভিড় করেন কুড়িয়ে আনা সবজি বিক্রেতাদের কাছে।

বাজারের মুরগিপট্টির এক কোণে পলিথিন বিছিয়ে বসেন মনি। কয়েকটি শসা, বেগুন, শাক, কাঁচা কলা, দুটি মুলা, একটি জাম্বুরা ও অর্ধেক বাঁধাকপি তাঁর সম্বল। ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে অর্ধেক সবজি। কাদের জন্য এই দোকান জিজ্ঞেস করতেই মনি বলেন, ‘আমাগোর মতো যারা গরিব, তাগো লেইগ্যা। ওরা তো বড় দোকানে গিয়া কিনবার পারে না। তাই আমি তাগো লেইগাই বেচি। আমার সবজি কি আর টাই-কুট পরা মাইনশে নিব?’

এই সামান্য আয়ে কেমন চলে জানতে চাইলে মনি বলেন, ‘এক বেলা খাইয়া না খাইয়া যায়। কষ্টে কষ্টে জীবনটা গেল। মাঝেমধ্যে মনে হয় মাঝসাগরের মধ্যে ভাসতেছি। দুঃখের জীবন, না পারা যায় কওয়া, না পারা যায় সওয়া।’

মনি থাকেন মহাখালীর সাততলা বস্তিতে। তাঁর দিনমজুর স্বামী ছয় বছর আগে মারা গেছেন। দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার সাগর একাই পাড়ি দিতে হচ্ছে তাঁকে। মনি বলেন, ‘রাত দুইটা-তিনটার সময় ঘর থেইকা বাইর হই। মাঝেমধ্যে এলাকার ভ্যান পাইলে উঠি, নাইলে চারটার দিকে হাইটাই আসি কাওরানবাজার। এখানে ট্রাকে থিকা কেনার পর যা থাকে ওগুলা টুকানো লাগে। এর কাছে দুইটা, ওর কাছে দুইটা চাইয়া আনি।’

এমন কুড়ানো সবজির বিক্রেতা শুধু মনি নন, কারওয়ানবাজারে রাহেলা, খাদিজাসহ অনেকেই এমন ছোট সবজির দোকান নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বার্তা কক্ষ, ২০ জানুয়ারি ২০২৩

Share