বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। ধীরে ধীরে বাড়ছে এর তীব্রতা। এরই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার জনপদের লেপ তোশক তৈরির কারিগর (ধুনকর) ও ব্যবসায়ীদের।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সকাল। সন্ধ্যা নামলেই অনুভূত হচ্ছে শীত। পাতলা কাঁথার মানছে না শীত। তাই হিমেল ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন লেপের উষ্ণতার। শীতের তীব্রতা বাড়ার আগেই মানুষ ভিড় জমাচ্ছে লেপ তোশক তৈরির বেডিং স্টোরগুলোতে। দিনে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে সকালে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে শীত।
মতলব উত্তর উপজেলার প্রায় শতাধিক লেপ-তোশক তৈরির দোকানে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ধুনকররা। শীতের আগমনকে উপলক্ষ করে দোকানগুলোতে লেপ-তোষক বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। হিমেল ঠাণ্ডায় শরীরকে সতেজ রাখার জন্য বিশেষ করে লেপের চাহিদা বেড়ে যায়। শীতের প্রচন্ড ঠাণ্ডায় হাড়কাপানো পরিস্থিতি রাতের নিদ্রায় একটু আরামের জন্য লেপের উষ্ণতা প্রশান্তি এনে দেয়। তাইতো বেড়েছে লেপ-তোশক তৈরি ধুনকরদের ব্যস্ততা।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ লেপ-তোশক ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে উপজেলার হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটে।
হিমেল শীতের পরশ থেকে উষ্ণতা পেতে কেউ পুরোনো লেপ-তোশক, বালিশ ঠিকঠাক করছে। আবার কেউ নতুন তৈরি করার অর্ডার দিচ্ছেন। অন্যদিকে অনেকে উঠিয়ে রাখা লেপ-তোষক বের করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন বেডিং আর কটন শোপ দোকানগুলোতে গিয়ে তাদের কর্ম ব্যস্ততা লক্ষ করা যায়। কারিগররা কেউ তুলো ধুনছে, কেউ ব্যস্ত লেপ-তোশক সেলাইয়ের কাজে, কেউ বা লেপে হরেকরকম ডিজাইন ফুটিয়ে তুলছেন। শীত মৌসুমেই তাদের সারা বছরের ব্যবসায়িক হিসাব মেলাতে হয়।
মতলব উত্তর উপজেলার অর্ধশতাধিক কারিগর শীত মৌসুমে লেপ-তোষক তৈরি করে সারা বছর সংসার চালানোর মতো অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেন। তাই শীত মৌসুমি এ ব্যবসায় একটু বেশি বিক্রির জন্য দিন-রাত সমানতালে পরিশ্রেম করছেন তারা।
বর্তমানে বাজারে শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৪৬০ থেকে ৬২০ টাকা, কার্পাস তুলা প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩৬০ টাকা, প্রতি কেজি কালো হুল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, কালো রাবিশ তুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সাদা তুলা ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করে দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় তুলার দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপড়ের প্রতি গজে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। প্রতিপিছ লেপ-তোশক তৈরিতে খরচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ধরনের একটি লেপ বানাতে খরচ হচ্ছে ১২০০ থেকে দুই হাজার টাকা। তোষক বানাতে ১৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বিভিন্ন রকমের দামী-কমদামী তুলার প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।
প্রতিদিন একজন কারিগর পাঁচ থেকে ছয়টি লেপ তৈরি করতে পারেন। আর একটি লেপ-তোশক বিক্রি করলে তাদের ৩০০ থকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। শীত মৌসুমের শুরুর দিকে কাজের চাপ বেশি থাকে। এ সময় প্রতিদিন তাদের ১৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ থাকে।
ক্রেতা আদুরভিটি গ্রামের আরমান কাজী বলেন, শীত মৌসুম চলে আসছে। এখন আর পাতলা কাঁথায় শীত মানছেনা। তাই পুরোনো লেপ নতুন করে তৈরি করতে এসেছি। কাপড় ও তুলার দাম বাড়ার কারণে খরচ বেশি লাগছে।
লেপ কিনতে আসা নুরুন নাহার নামে এক গৃহিণী বলেন, ছেলের জন্য একটা লেপ কিনতে এলাম। গত বছর যে লেপ ১৩০০ টাকায় নিয়েছি এবছর সমমানের লেপই ১৬০০ টাকায় কিনতে হলো ।
উপজেলার ছেংগারচর বাজার থানা রোড সংলগ্ন আল্লাহ বেডিং স্টোরের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী আয়নাল মিয়া বলেন, শীত মৌসুমের আগমনে ক্রেতারা নতুন লেপ তোশক কিনে নিচ্ছেন।
অনেকে আগেভাগে পুরোনো লেপ-তোশক, বালিশ ঠিকঠাক ও নতুনভাবে তৈরি করার অর্ডার দিচ্ছেন। শীত মৌসুমে বেচা-বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আয় রোজগারও বাড়ে। বছরের অন্যান্য সময়ের মন্দাভাব পোষিয়ে নিতে এখন সমান তালে কাজ করছি।
খাজা বেডিং স্টোরের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, সারা বছরই টুকিটাকি বেচা-কেনা হয়। তবে শীত মৌসুমের শুরু থেকে দোকানে কাজের চাপ বাড়ে। বিক্রিও ভাল হয়। কাপড়, তুলার মান ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে লেপ-তোশক তৈরির খরচ কম বেশি হয়। কাপড় ও তুলার মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার খরচও কিছুটা বেড়েছে। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোশকের চাহিদা আরও বাড়বে। আমি ৪- ৫ হাত লেপ বিক্রি করছি৫ কেজি তুলা দিয়ে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায়। আর তোশক বিক্র করছি ১৭০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায়।
প্রতিবেদক: খান মোহাম্মদ কামাল,৭ নভেম্বর ২০২৩