চাঁদপুরে শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদন ১ লাখ ৩২ হাজার মে.টন

চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা,পদ্মা, মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় রবি,আউস, আমন ও বোরোর মত কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক গ্রীষ্মকালীন শাক-শবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে।

চাঁদপুরে এবারের শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ ৬ হাজার ১ শ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩২ হাজার ২শ মে.টন। প্রকৃত পক্ষে আরো বেশি পরিমাণ শাক-সবজি উৎপাদনের অনেক পতিত জমি রয়েছে- যেগুলোতে প্রণোদনা পেলে চাষাবাদ সম্ভব ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের ২০২৫-২৬ চলমান মৌসুমে রবি ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে ।

রবি মৌসুমে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমিতে ফুলকপি, বাধাঁকপি, ওলকপি, ব্রো-কলি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, কুশি, লালশাক, ঘি-কাঞ্চন (সাদা শাক), পালংশাক, গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বড়ো ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে শীতকালীন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

প্রাপ্ত দেয়া তথ্য মতে, চাঁদপুরে এ বছর শাক-সবজির চাষাবাদ ৯ শ’ ৯৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৯ শ’ ৯০ মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ ১হাজার ২শ ৪৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৩শ ৯০ মে.টন, মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ২শ’ ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৫০ মে.টন, হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ৯শ’ ৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৯ শ ১০ মে.টন । শাহরাস্তির চাষাবাদ ৩ শ’ ৯৫ হক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৬শ ৯০ মে.টন, কচুয়ায় চাষাবাদ ৪শ’১৮ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ১শ ৯৬ মে.টন, ফরিদগঞ্জের চাষাবাদ ১ হাজার ২ শ’ ৪৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৩ শ ৯০ মে.টন,হাইমচরের চাষাবাদ ৬ শ’ ২২ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৮ শ ৮৪ মে.টন ।

বিশেষ করে চাঁদপুরের ১১ টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ শাক-সবজি ব্যাপকভাবে চরবাসীরা চাষাবাদ করে থাকে। নারীরাই এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। গরু, ছাগল , হাঁস ও হাঁসের ডিম , মুরগি ও মুরগির ডিম ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালনে মেঘনা অববাহিকায় ও চরাঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণীভূমিকা পালন করে আসছে।

দিন-রাত পরিশ্রম করেই তারা এ শাক-সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে । কোনো কোনো এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তারা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষাবাদ করে আসছে। তাদের জীবিকার প্রধান বাহন কৃষি,সবজি চাষাবাদ ও হাঁস, মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন ।

চাঁদপুরে ধান, পাট, আলু, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন সরিষা,মরিচের পরেই শাক-সবজির স্থান। এটি এখন বেশ লাভজনক। চাঁদপুরের উৎপন্ন শাক-সবজি নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন শহরে বন্দরে চলে যায় । আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ,পরিবহনে সুবিধা,কৃষকদের শাক-সবজি চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত, কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা,বীজ ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষ করছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক শাক-সবজির উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। চাষীরা ঋণসহায়তা পেলে শাক-সবজি চাষাবাদে আরোও উৎসাহী হতো।

চরাঞ্চলগুলি হলো-মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম, সবজি কান্দি, ষষ্ট খন্ড বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা,লগ্নিমারা, বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার,সাহেব বাজার ও চরভৈরবির বাবুরচর ইত্যাদি। গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে-চিচিঙ্গা, করলা, ডেঁড়স, বরবটি, পটর, কাকরল, ধুন্দুল, ডাটা, ঝিংগা, বেগুন প্রভৃতি। চাঁদপুরের কুমারডুগি, মহামায়া, দেবপুর, মাস্টার বাজার, সুন্দরদিয়া এলাকায় ব্যাপকহারে ও বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে । চাঁদপুরের সকল উজেলায়ই প্রচুর শাখ-সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে ।

বিশেষ করে হাইমচর , চাঁদপুর সদর ও মতরব উত্তর-দক্ষিণ উপজেলায় প্রচুর লাউ ,সীম, করলা, মিষ্টি কুমড়া ,কচু ও কচুর লতি ,লালশাখ ,পালং শাক ,মুলা ,ধেড়স , ধনিয়াপাতা ও কলমি শাক প্রচুর পরিমাণে কৃষককুল বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন করে থাকে ।

চাঁদপুরের একজন কৃষিবিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলের উৎপন্ন শাক-সবজি খুবই সতেজ ও তরতাজা। এসব শাক-সবজিতে কোনো রকম ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা তারা বিক্রির জন্যে দিনের উঠানো গুলো দিনেই বাজারে বসে বিক্রি করে থাকেন।’

আবদুল গনি ,
২২ নভেম্বর ২০২৫