সরকারের মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার (সার্ভার) থেকে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের তথ্য চুরির অভিযোগে রংপুর ও ঢাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাঁদের কাছ থেকে চুরি করা তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত টেলিটকের ১ হাজার ১৭২টি সচল সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
তিনজনের মধ্যে দুজনকে রোববার রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রংপুরে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সুপারভাইজার আহমেদ জাহিদ আনোয়ার (৩০) ও রংপুর সিটি করপোরেশনের কম্পিউটার অপারেটর মাহমুদুল হাসান মামুন (৩০)। তাঁদের কাছ থেকে চুরি করা তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত ১ হাজার ১৫০টি সচল টেলিটকের সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার ঢাকার মতিঝিল থেকে ২২টি সিম কার্ডসহ সাইদুল শেখ (২২) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, টেলিটকের নিবন্ধিত গ্রাহকের নাম-পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য থেকে শুরু করে আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক তথ্য) পর্যন্ত সার্ভার থেকে চুরি করেছে চক্রটি। এরপর সেই তথ্যগুলো দিয়ে সিম নিবন্ধন করে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বাজারে বিক্রি করা হতো। অর্থাৎ নিবন্ধিত একজন গ্রাহকের অগোচরে তাঁর পরিচয়-আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে আরও সিম কার্ড বাজারে ছাড়া হচ্ছিল। আর ওই সব সিম কার্ড দিয়ে যেকোনো অপরাধ হলে দায়টা চাপবে গ্রাহকের ঘাড়েই।
তবে তথ্যভান্ডার থেকে গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে গেলেও বিষয়টি জানেনই না টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী গোলাম কুদ্দুস। তিনি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিশিয়ালি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুঠোফোন ব্যবহার করে অপরাধ কমাতে গত বছর দেশের সব গ্রাহকের মুঠোফোন নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু এরপরও মুঠোফোন ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সূত্রগুলো বলছে, সার্ভারে রক্ষিত গ্রাহকের তথ্য চুরি খুবই ভয়ংকর ঘটনা। তবে এ বিষয়ে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, গত জুলাইয়ে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি এলাকার এক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নেয় একটি চক্র। ঘটনাটির তদন্তে নেমে কর্মকর্তারা অপরাধী চক্রের মুঠোফোন নম্বরের নিবন্ধনের তথ্য ধরে খোঁজখবর শুরু করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁরা বুঝতে পারেন, যাঁর নামে সিম কার্ডটি নিবন্ধিত, তিনি কোনো দিন ওই নম্বরটি ব্যবহার করেননি। দেখা যায়, সিম কার্ডটির নিবন্ধন করা হয়েছে রংপুর থেকে। এরপরই পাওয়া যায় ওই জালিয়াত চক্রটির সন্ধান। এরপর সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব ফারহানের নেতৃত্বে একটি দল রংপুর ও ঢাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
রাজীব ফারহান প্রথম আলোকে বলেন, সিম নিবন্ধনের সময় একজন গ্রাহক আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় যেসব তথ্য দেন, সেগুলো সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন কোম্পানির সার্ভারে থাকে। সার্ভারে থাকা গ্রাহকের সেই তথ্য চুরি করে অন্যের নামে সিম কার্ড নিবন্ধন করেন। সেসব সিম রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছিল ওই চক্রটি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা মূলত এসব সিম কার্ড কিনে নানা ধরনের প্রতারণা, হুমকি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করে থাকে। কিন্তু ওই সব সিম কার্ড ব্যবহার করে কোনো অপরাধ হলে যাঁর নামে সিমটি নিবন্ধিত তাঁকেই আগে খুঁজবে পুলিশ।
এদিকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুরজানান, এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত রংপুরের কোতোয়ালি থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম। পুলিশ জানায়, রোববার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের একজন মাহমুদুলের বাবা রফিকুল ইসলাম তাঁর ছেলে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৩৩ পিএম, ৭ নভেম্বর, ২০১৭ মঙ্গলবার
ডিএইচ