দীর্ঘ ৭ বছরেও শিশু মারজানা হত্যার বিচার পায়নি অসহায় পরিবার

চাঁদপুরের আলোচিত শিশু শিক্ষার্থী মারজানা আক্তার (৯) ধর্ষণ ও হত্যার ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে ২২ ডিসেম্বর। ২০১৭ সালের এই দিনে ৪ বখাটে যুবক কতৃক মারজানাকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করে বিলের মধ্যে মরদেহ ফেলে রাখে। চাঁদপুরের বহুল আলোচিত এ ঘটনাটি দীর্ঘ ৭ বছর পেড়িয়ে গেলেও বিচার পায়নি শিশুটির পরিবার। আটক চার আসামীর মধ্যে জালাল হাওলাদার ও সিদ্দিক বেপারী (১ ও ২নং আসামী) হাজতে রয়েছে। আর ৩ এবং ৪নং আসামী নান্নু চৌকিদার ও সেলিম বেপারী আটক হলেও তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপর দিকে মেয়ে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় চোখের জল ফেলছে মারজানার অসহায় পরিবার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চাঁদপুর হাইমচর উপজেলার দুর্গম চর ঈশানবালা বাজারের পাশের বিল থেকে শিশু মারজানের (৯) মরদেহ উদ্ধার করে তার পরিবার। তখন এই ঘটনাটি জ্বিন-ভুতের কাজ বলে চালিয়ে দেয় গ্রামের একটি মহল। তারা বলেন মারজানাকে ভুতে মেরে ফেলে রেখেছে। কিন্তু হতদরিদ্র বাবা মকসুদ হাওলাদার মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। মারজানার মরদেহে ক্ষতচিহ্ন এবং কিছু আলামত তার সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।

২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি সন্দেহভাজন ৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো কজনকে আসামীর চাঁদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মকসুদ হাওলাদার। আসামীরা হলেন, ঈশানবালা গ্রামে দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে জালাল মিয়া হাওলাদার (২১), কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম। আদালত হাইমচর থানার ওসিকে সরাসরি মামলা রজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানায় মামলা (নং ৪, তারিখ ১৬/০১/১৮ইং ধারা -৩০২/৩৭৬/২০১/ ৩৪/ ১০৯ দঃবিঃ) রুজু হয়। তদন্তভার দেওয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালিন এসআই সুমন মিয়াকে। এক বছরেও মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় তৎকালিন পুলিশ সুপার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। আইও নিয়োগ করা হয় ডিবির তৎকালিন এসআই শামীম আহম্মদকে। এরপর এসআই শামীম বদলী সূত্রে অন্যত্র গেলে ডিবির এসআই রেজাউলকে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়।‌ গোয়েন্দা পুলিশের এই চৌকস অফিসার মাত্র এক মাসের মধ্যে আসামী পালাতক নান্নু চৌকিদারকে গ্রেফতার করেন।

ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু নিজেসহ এজাহার নামীয় আরো ৩ আসামী মারজানকে নারকীয়ভাবে ধর্ষন ও হত্যার লোমহর্ষক বিবণে দেয় এবং আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। এরপর তৎকালিন পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় এসআই রেজাউল করিম আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২২ সালে গাজীপুর থেকে মামলার অন্যতম আসামী মো. সেলিম বেপারীকে গ্রেফতার করেন। পরে আটক সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হলে সে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। তবে আটকের কয়েক মাসের মধ্যেই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডেন আটক দুই আসামী নান্নু চৌকিদার ও সেলিম বেপারী আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। বর্তমানে এ মামলার ১ ও ২নং আসামী জালাল হাওলাদার ও সিদ্দিক বেপারী হাজতে রয়েছে।

এ বিষয়ে মারজানার বাবা মোকশেদ হাওলাদার বলেন, ‘অরা আমার লেদা মাইয়াডারে খারাপ কাজ মাইরা ফালাইছে। ৭বছরেও আমি বিচার পাইলাম না। যারা আমার কলিজার টুকরা মাইয়ারে এমন কইরা খুন‌ করছে তাদের ফাঁসি চাই।’ এই বিষয়ে তিনি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং মাননীয় জজ সাহেবদের সুদৃষ্টি কামনা করেন’

উল্লেখ, মোকশেদ হাওলাদারের ১ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মারজানা। সে স্থানীয় চর কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বিকেলে মারজানার মা বাজারের ব্যাগ দিয়ে তাকে বাবার কাছে দোকানে পাঠায়। বাজারে যাওয়ার পথে অভিযুক্তরা মারজানের মুখ চেপে রাস্তায় পাশে নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মামলার কয়েক মাস পর আদালতের নির্দেশে মারজানার লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। এই ঘটনায় চাঁদপুরের তৎকালিন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মারজানার পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। ওই সময়ে পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন অপরাধী যে হোক না কেনো দোষী প্রমানিত।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

Share