প্রথমবার স্টুডিও-ক্যামেরা-ঝাঁঝালো আলোর সামনে পড়ে, এ বছরের ১০ এপ্রিল, আব্রাম একটুও ঘাবড়ে যায়নি। মাঝে মধ্যে ইতস্তত হাত-পা ছুড়ে, মায়ের কোলে বসে, কী কী ভাবনা ঘুরছিল তার ছোট্ট মনে সেটা জানার কোনো উপায় নেই।
কিন্তু যখন মা, সারাদেশ যাকে অপু বিশ্বাস পরিচয়ে চেনে, ফুঁপিয়ে উঠছিলেন সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের উদ্বিগ্নতায়; আব্রামের চোখে মুখে ছিল নীরব বিষ্ময়!
আব্রামের সেই করুণ মুখ অনেকের মনেই হয়তো সাময়িক ক্ষত তৈরি করে গিয়েছিল সেদিন। কিন্তু মায়ের ওই কান্নার শব্দ আব্রামের ভীষণ চেনা। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে সে প্রায়ই মাকে কাঁদতে দেখে। ঘুমের মধ্যেও হয়তো কোমল গালে যে উষ্ণ অশ্রুফোঁটা টের পায় আব্রাম, চোখ খুললেই দেখে কাছাকাছি মায়ের মুখ— প্রচণ্ড কাতর। সে কারণ জানে না। পৃথিবী আর সম্পর্কের জটিলতা বোঝার মতো বয়স তার হয়নি। হয়তো বয়স হয়নি বাবার শূন্যতা বোঝারও।
প্রথম কান্না, প্রথম হাসি, প্রথম কোল, প্রথম বসতে শেখা, প্রথম জন্মদিন— কিছুতেই বাবাকে পায়নি আব্রাম। আদর হয়তো পেয়েছে দূর থেকে। কিন্তু এটা তো ভীষণ বেদনার— ১৫ মাস বয়সী আব্রাম এখনো বাবার চেহারাটাই চেনে না ভালো করে!
অথচ এই এক টুকরো চাঁদকে কেন্দ্র করে তার বাবা-মা, শাকিব-অপু এখন মুখোমুখি অবস্থানে। মায়ের চোখে উদ্বিগ্নতা আর বাবার চোখে জেদ। মা তার জন্য রেখেছেন নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা-পরিচর্যা, আর বাবার মুখে ভবিষ্যৎ খোরপোষের প্রতিশ্রুতি। কোনটাকে এ সমাজ বড় করে দেখে— আব্রাম তা জানে না।
আব্রাম জানে না— মায়ের আদর আর নিরন্তর সংস্পর্শ থেকে তাকে কেড়ে নেওয়া হবে কিনা! কোনোদিন তাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কিনা যেখানে তার মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে একটা প্রশ্ন— ‘কাকে চাও? মা, নাকি বাবা?’
যা বলছেন মনোবিজ্ঞানী রাউফুন নাহার লিয়া
আব্রাম যদিও এখন খুব ছোট, তারপরও শিশুরা বুঝতে পারে। একদম ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা দুজনকেই প্রয়োজন হয় শিশুদের। শাকিব-অপু যে আলাদা, তাদের মধ্যে যে কাদা ছোড়াছুড়ি, বড়রা বড়দের মতো করে রিফিউজ করলেও শিশুরা তাদের মতো করে অভাবটা বুঝতে পারে। আর এখন যদি শাকিব-অপু আলাদা হয়ে যান, আব্রামকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে— কখনো বাবার সঙ্গে কখনো মায়ের সাথে থাকবে। সব মিলিয়ে এক ধরনের আক্ষেপ, কারও প্রতি ঘৃণা, বা অন্তর্মুখী হয়ে ওঠা— এসব ইমোশন ওর মধ্যে কাজ করবে। সেগুলো পরবর্তীকালে ওর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
আর যেহেতু আব্রামের বাবা-মা দুজনই তারকা, ও যখন স্কুলে পড়বে তখন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। ওর বন্ধু বা বন্ধুর বাবা-মায়েরা এসব নিয়ে গসিপ করবে নিশ্চয়ই। ও খুব বিব্রতবোধ করবে। এগুলো মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। আর এখন যেমন পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে, পরবর্তীকালে যদি কোর্টে কোনো মুভমেন্ট হয়— বড় হয়ে আব্রাম এসব খুঁটিয়ে পড়বে। এসব জানবে। স্বাভাবিকভাবেই এসব ওর মধ্যে অনেক ধরনের নেগেটিভ ইমোশন তৈরি করবে। যেমন— অতিরিক্ত রাগ, ঘৃণা, ক্ষোভ বা হতাশা।
বাবা-মায়ের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বিচ্ছেদ একটা শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। তবে এখন শাকিব-অপু যে অবস্থায় আছে, এর চেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যদি একটা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আসা যায়!
কখন বাবার কাছে থাকবে, কখন মায়ের কাছে থাকবে— এটুকু বোঝাপড়া থাকলে বোধহয় শিশু আব্রামের এসব সমস্যার খানিকটা সামাল দেওয়া সম্ভব।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:১০ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ