নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছোট শিশুদের সাধারণত হয় না এবং শিশুরা ঝুঁকিমুক্ত—এমন ধারণা অনেকের আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ভিন্ন কথা বলছে। এসব গবেষণায় জানা গেছে, শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে তাদের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়,যার সঙ্গে সাধারণ ফ্লুর পার্থক্য করা যায় না। শিশুদের যদি অন্য শারীরিক জটিলতা থাকে (যেমন—হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি)। তবে করোনা–আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই শিশুদের বিষয়েও সতর্ক হওয়া দরকার।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত শিশু নিজেরা তেমন অসুস্থ না হলেও তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। কাজেই তাদের মাধ্যমে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য (দাদা-দাদি, নানা-নানি) এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সংক্রমিত হতে পারেন। কাজেই শিশুদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। তবে এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে তাদের বাড়িতে রেখেই শুশ্রূষা করতে হবে। কারণ, শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সংক্রমণের উপসর্গ থাকে মৃদু। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, তাদের মাধ্যমে যেন ভাইরাসটি না ছড়ায়।
শিশুদের হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার শেখাতে হবে। তবে তা ধমক দিয়ে নয়, বুঝিয়ে বলতে হবে। এ সময় শিশুদের বাড়ির বাইরে বের হতে দেয়া উচিত হবে না। বাইরে থেকে আসা কারও সংস্পর্শ থেকেও তাদের দূরে রাখতে হবে।
বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের পুরোপুরি আলাদা করে রাখতে হবে। শিশুরা যদি কোনো কারণে সামান্য অসুস্থও হয়, তারপরও তাদের বয়স্ক আত্মীয়ের কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। শিশুদের নিয়ে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ারও দরকার নেই।
তবে আলাদা করে ফেলার বিষয়টি শিশুদের মনের ওপর চাপ ফেলতে পারে। তারা অসহায় বোধ করতে পারে,ক্ষুব্ধ হতে পারে। তাই তাদের টেলিফোন, স্কাইপে, হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে কথা বলার ও সময় কাটানোর সুযোগ করে দিন।
কেন প্রিয়জনদের আলাদা করে রাখতে হচ্ছে, তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। এমনকি প্রয়োজনে মা-বাবাকেও যে যখন-তখন আলাদা হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে,সে বিষয়েও আগেভাগেই জানিয়ে রাখুন।
যেসব শিশু ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন যাদের ছোটবেলা থেকে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি আছে কিংবা যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছে, যারা কিডনি বা কোনো রোগের কারণে স্টেরয়েড ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমায়—এমন অন্য ওষুধ সেবন করে, তাদের জ্বর-কাশিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন। অসুস্থ হওয়ামাত্র চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
লেখক : অধ্যাপক মো.সেলিম শাকুর, কনসালট্যান্ট, শিশু ও নবজাতক বিভাগ,ইউনাইটেড হাসপাতাল , ২৯ মার্চ ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur