জাতীয়

শিল্পপতি রাগিব আলী ভারতে গ্রেফতার

শিল্পপতি রাগিব আলীকে ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেফতার করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছে, রাগিব আলী যে ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেফতার হয়েছেন তা সিলেটের মুখ্য আদালতের নকল শাখাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত থেকে দেশে এনে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের বেশি ভারতে কেউ থাকতে পারবেন না। কিন্তু রাগিব আলী ১০ আগস্ট সিলেট থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তার ৯০ দিন হয়ে যায়। পরে তিনি ভারতে করিমগঞ্জের ইমিগ্রেশনে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে আসেন। কিন্তু ৯০ দিনের বেশি সময় থেকে ভারতে থাকার কারণে তার ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের ইমিগ্রেশন পুলিশ।

সিলেটের জকিগঞ্জের ইমিগ্রেশনের ইনজার্জ মোশারফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাগিব আলী ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেফতার হয়েছেন কিনা এ বিষয়টি জানা নেই।’ এছাড়া জকিগঞ্জের কাস্টমসের রাজস্ব কমকর্তা আব্দুস সামাদও এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় চলতি বছরের ১০ জুলাই। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান অভিযোগপত্র দুটি আদালতে দাখিল করলে ১০ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরোয়ানাভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন— তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রুজিনা কাদির ও জামাতা আবদুল কাদির। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওইদিন বিকালে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান রাগীব আলী ও তার ছেলেমেয়ে। পরবতীতে রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ হয়ে জকিগঞ্জ কাস্টমস দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ ইমিগ্রেশন পুলিশ আব্দুল হা্ইকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইসহ ছয়জন অভিযুক্ত। এরমধ্যে তারাপুর চা-বাগানের বৈধ সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তও রয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারের রায় দেন। এ রায়ে ১৭টি নির্দেশনার মধ্যে এ মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত এক আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশ দিলে ১০ জুলাই রাগীব আলীসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে পিবিআই অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। ১০ আগস্ট দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ওই দিনই তারা পালিয়ে ভারতে চলে যান। মামলার অপর চার আসামির মধ্যে রাগীব আলীর মেয়ে ও মেয়ের জামাতা পলাতক রয়েছেন।

ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত সাজা গত ১০ অক্টোবর রাগীব আলীর আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত অপর আসামি তারাপুর চা-বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। -বাংলা ট্রিবিউন
করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০০ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share