ফিচার

শিক্ষিত হচ্ছি ঠিকই, কিন্তু ভালো মানুষ হতে পারছি না

কেউ মানুষ শব্দের বিশ্লেষণ মান +হুশ। যার হুশ আছে তিনিই মানুষ।কিন্তু সমাজের চিত্রপট যেনো ভিন্ন কোন ইংগিত করছে আমাদের।মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই,সে মানুষের ভিড়ে যেনো ভালো মানুষ নাই। আবার ভালো মানুষ নাই এমনটা ও ঠিক নয়,তবে তার পরিমান খুবই স্বল্প।

প্রশ্ন হচ্ছে এমন অনেকেই বড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিখছে অনেক কিছু।পড়ছে উচ্চ শিক্ষা,হচ্ছে কোটিপতি!

কী আজব কেউ ভালো মানুষ হতেই চাচ্ছে না। ১০০ জন শিক্ষার্থীকে যদি বর্তমানে জিজ্ঞেস করা হয় বড় হয়ে কী হতে চাও? ৯৯ জনই বলবে,অমুক ভাইয়ের মত ব্যারিষ্টার, ডাক্তার,পুলিশ কর্মকর্তা,এসপি,ডিসি সহ সম্মানিত কোন ব্যক্তি।কিন্তু আদৌ শিক্ষার্থীরা ভালো মানুষ হতে চাই কথাটা মুখে দিয়ে আনতে কুন্ঠাবোধ করে।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমরা বিভিন্ন সেবামূলক পেশায় জড়াচ্ছি। দুভার্গ্য, সে পেশাকে অনেকেই অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন। যেমন, ওই প্রসূতি ‘মা’ যার সন্তান ১৫০০ টাকা না দিতে পারার কারনে সন্তান হাসপাতালের বেডে নয়,প্রসব হয়েছে বারান্দায়। তাও সে হাসপাতালটি ছিলো সরকারি।অ াজিমপুরের মাতৃসদন হসপাতালের ঘটনা এটি।

পত্র-পত্রিকার বরাত আর স্বজনদের বরাত দিয়ে জানলাম,দারিদ্রতার কারনেই হাসপাতালে চিকিৎসার সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছেন সেই প্রসব যন্ত্রনায় কাতর মা!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা ডাক্তার,ব্যবস্থাপক তাঁরা অবশ্যই শিক্ষার আলোয়, আলোকিত। শিক্ষার কোন স্তরে তাঁরা পেয়েছেন যে, সেবা পেতে পয়সা খরচ করা লাগে,তা ও আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানে।

আবার শুনলাম,কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের কাছে এক ব্যবসায়ী কে জিম্মি করে, পরিবার থেকে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে ডিবি পুলিশ। সেনাবাহীনি তাদেরকে টাকাসহ আটক করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো, আসলেই কী আমরা মানুষ হতে পেরেছি, আমাদের হুশ -জ্ঞান কী আছে, আমরা কতটা ভালো মানুষ হতে পেরেছি?

জানি এ প্রশ্নের কোন জবাব নেই। রীতিমত আমরা সকল ক্ষেত্রেই এখন টাকাটাকে বড় করে দেখছি। এই যে সারা দেশে, কোচিং, প্রাইভেট বাণিজ্যে বন্ধের সরকারের এত হুশিয়ারী। কিন্তু কয়টা প্রাইভেট, কোচিং বন্ধ হচ্ছে। দিনে-দিনে তা আরো বেড়েই চলেছে।

পরীক্ষা আসলে ফরমফিলাপ নামক বাড়তি ঝামেলা তো রয়েছেই। শিক্ষাগুরুরা এখন অর্থের কাছে নিজেদের সোপর্দ করেছে।

তবে কী আমাদের জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা আরম্ভ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক’দিন আগে জাপান সফরকারী একজন ব্যবসায়ীর লেখা আর্টিকেল পড়ে জানতে পারলাম,জাপানে নাকি একাডেমিক(কিন্ডারগার্টেন) লাইফ থেকে তিনটা জিনিস প্রথমেই শেখানো হয় ১ কননিচিওয়া(হ্যালো) ২ আরিগাতোউ(ধন্যবাদ) গোমেনাসাই(দুঃখিত)।

অর্থাৎ কারো সাথে দেখা হলেই কুশল হিসেবে তাকে বলতে হবে হ্যালো। কারো দ্বারা বিন্দু মাত্র উপকৃত হলে তাকে বলতে হবে ধন্যবাদ।আর কেউ মনে কষ্ট পেলেও তাকে দুঃখিত বলে ক্ষমা চাইতে হবে।

আর এজন্যই হয়তো তাঁরা হয় মানবিক। এমনও পড়েছি, আপনার গাড়ি আছে, সন্তানকে স্কুল পৌঁছে দিবেন গাড়ি করে।আপনাকে স্কুল থেকে অপমান হয়ে আসতে হবে। এখানে কোন দাম্ভিকতার মূল্য নেই।

আমরা শিক্ষিত হচ্ছি ঠিকই ,মানবিক গুণাবলী হারাতে বসেছি।

ক’দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান লিখেছিলো, এক সময় ভালো অবকাঠামো ছিলো না, ভালো শিক্ষক ছিলো। এখন অবকাঠামো ভালো, নেই ভালো শিক্ষক। আবার যারা শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে ও শিক্ষক ভক্তি হীনতূল্য। অনেক শিক্ষার্থী তো শিক্ষককে শিক্ষকই মনে করে না।

আর এই যে হীনমন্যতা এটাই ভবিষতে ভালো মানুষ হওয়ার পথে অন্তরায়। বছর,বছর আমরা পাস করছি আর সার্টিফিকেট বের করছি,আদৌ ভালো মানুষ হওয়ার একখান সার্টিফিকেট ও বের করতে পারি নাই।

তাই সর্বশেষ কথায় বলতে চাই,আমাদের পাঠক্রমের প্রথমেই, বিশেষ করে প্রাথমিকে ‘ভালো হতে চাই’ নামক পাঠক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হউক। এমন ও তো হতে পারে জাপানের মত আমাদের দেশের মানুষ ও ভালো মানুষের গাড়িতে চলতে পারবে।

লেখক- রিফাত কান্তি সেন
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট

Share