আন্তর্জাতিক

শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ১৩ কোটি নারী

উন্নত এবং ধনী দেশগুলোতে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। ধনী দেশগুলোর স্কুলগুলোতে শিক্ষার বিষয়গুলোকে তাই বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

কোন বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত, কোন শিক্ষার্থীর একটু আলাদা যত্ন দরকার, পড়াশোনার কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়াতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু অসংখ্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য শিক্ষা বিষয়ক প্রশ্নগুলো অনেক বেশি মৌলিক। অনেক স্থানেই শিশুদের শিক্ষা অর্জনের জন্য স্কুলও নেই।

জাতিসংঘের কিছু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত দশকে বিশ্বের বেশ কিছু দরিদ্র দেশে স্কুল সংকট মোকাবেলায় কোন উন্নতিই হয় নি।

পরবর্তী একটি প্রতিবেদনে শিক্ষার মান যাচাই করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, অবস্থা এতটাই জটিল যে ৬০ কোটিরও বেশি শিশু স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই শিখছে না।

পশ্চিমা ধনী দেশগুলোতে যেখানে মেয়েরা পড়াশোনায় ছেলেদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে, সেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকার মতো দরিদ্র দেশে স্কুলগুলোয় মেয়েদের খুঁজে পাওয়াটাই বরং দুষ্কর।

তাই আন্তর্জাতিক মেয়ে শিশু দিবস এ জাতিসংঘ একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। মেয়েদের পড়াশোনায় অবান্ধব ১০ টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে তারা।

এই ১০ টি দেশের বেশিরভাগ স্কুলগুলোতেই মেয়েদের উপস্থিতি নগণ্য। এই দেশগুলোর অধিকাংশ পরিবারই দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যহানি, পুষ্টি-হীনতা এবং যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে উৎখাতের শিকার।

এখানে ধরেই নেয়া হয় মেয়েরা স্কুলে যাবার বদলে কাজ করবে এবং অসংখ্য মেয়ে শিশুর বিয়ে হয়ে যায় আর এর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় তাদের শিক্ষার্জনের সমস্ত সম্ভাবনা।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, এই সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে মেয়েদের পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার হার অন্যান্য অঞ্চলগুলোর প্রায় দ্বিগুণ।

তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান। বিশ্বের নবীনতম স্বাধীন এই দেশটি অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য স্কুল, পরিবারগুলোও বাধ্য হয়েছে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে। এখানে তিন-চতুর্থাংশ মেয়েই প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডিই পার হতে পারে না।

এর পরেই আছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। এখানে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন মাত্র শিক্ষক। অপরদিকে নিজারে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ শিক্ষিত।

আফগানিস্তানে তীব্র লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে। সেখানে স্কুলগুলোতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পরিমাণ বেশি। আর চাদে মেয়ে শিশু এবং নারীদের শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে অনেক সামাজিক আর অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। তাই মেয়েরা সেখানে খুব কমই স্কুলে যেতে পরে।

মালিতে মাত্র ৩৮ শতাংশ মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে সক্ষম হয়। গিনিতে ২৫ বছর বয়সের বেশি নারীরা পড়াশোনায় ১ ঘণ্টারও কম সময় ব্যয় করতে পারে। বুরকিনা ফাসোতে মাত্র ১ শতাংশ মেয়েরা মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করতে পারে। লাইব্রেরিয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ের দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই স্কুলে যায় না। অপরদিকে ইথিওপিয়ায় পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন মেয়েরই ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। শিক্ষকের সঙ্কট এ দেশগুলোর একটি সাধারণ সমস্যা।

গত বছর জাতিসংঘের একটি বিবৃতি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আরও ৬৯ মিলিয়ন শিক্ষকের প্রয়োজন।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি বলছে, মেয়েদেরকে যদি স্কুলে রাখা যায় তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। ক্যাম্পেইন ওয়ান-এর প্রেসিডেন্ট গেইল স্মিথ মেয়েদের পড়াশোনার এই ব্যর্থতাকে দারিদ্র্য উস্কে দেয়ার বৈশ্বিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ১৩০ মিলিয়ন বা ১৩ কোটিরও বেশি নারী এখনও স্কুলে যেতে পারছেন না। অর্থাৎ সম্ভাবনাময় ১৩০ মিলিয়ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, শিক্ষক আর রাজনীতিবিদ যাদের নেতৃত্ব থেকে বিশ্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৩০ এএম, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭ বুধবার
এইউ

Share