সমাজের হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অর্থ আত্মসাৎ এবং অসত্য তথ্য প্রদানের অভিযোগে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) সাহাব উদ্দিনকে শোকজ করেছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
শোকজের অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, (গ্রেড-১), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক এবং প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালককে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ২৪ মে ২০২১ খ্রি. তারিখে চঁাদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ০৫.৪২.১৩০০.০৩২.০৫.০২১.২১-২৪২ নং স্মারকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) সাহাব উদ্দিনকে করা শোকজ পত্রে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকার ০৭.০১.২০২১ তারিখের ৮২৪ নং স্মারকপত্রে শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-২০, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর এর ভবন নির্মাণ/সংস্কার ও মেরামত কাজ সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে প্রেরিত অর্থ ব্যয়ের বিল ভাউচার ৩০ এপ্রিল ২০২১ তারিখের মধ্যে ট্রাস্ট দপ্তরে প্রেরণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে এ কার্যালয়ের ২৭.০১.২০২১ তারিখের ৮১নং স্মারকে আপনাকে পত্র দেয়া হলেও বিল ভাউচার দাখিল না করায় পুণ: ১১.০৫.২০২১ তারিখের ২৩৩নং স্মারকে বিল ভাউচার দাখিলের জন্য আপনাকে তাগিদপত্র দেয়া হয়।
তদপ্রেক্ষিতে সূত্রোক্ত স্মারকে আপনি জানান যে, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-২০, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর এর মেরামত/আসবাবপত্র কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে কমিটি গঠনের নিমিত্তে মার্চ/২০২১ মাসের ১ম সপ্তাহে জেলা প্রশাসক মহোদয় কর্তৃক ২জন বিশিষ্ট সমাজ সেবীর নাম মনোনয়ন দেয়ার জন্য নথি উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু মনোনয়ন না পা্ওয়ায় কমিটি পুন:গঠন সম্ভব হয় নাই। কমিটি পুন:গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয় মেরামত/অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হবে’’ মর্মে পত্রে উল্লেখ করেন।
শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-২০, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর এর মেরামত/সংস্কার কাজ সম্পাদনের জন্য ২ জন সমাজসেবী মনোনয়নের জন্য আপনার কার্যালয়ের নথিতে প্রস্তাব করায় সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উক্ত নথিতে কমিটির মেয়াদ কবে শেষ হবে বা হয়েছে/কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা বা কারণ উল্লেখ সহ পুন: নথি উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে নথি প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে উক্ত নথির ৮নং অনুচ্ছেদে ২জন সমাজসেবী মনোনয়নের জন্য পুন:প্রস্তাব করায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ৯নং নোট অনুচ্ছেদে বর্তমান কমিটির সদস্যদের নিয়ে ১টি মিটিং আহবান করে ৮নং অনুচ্ছেদের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট প্রেরণ করেন।
অত:পর নথির ১০নং নোট অনুচ্ছেদে উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কে সভা করার এবং এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ০৪.০৪.২০২১ তারিখে আদেশ প্রদান করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নথিতে সহকারী কমিশনার, শিক্ষা কে ০৪.০৪.২০২১ তারিখে মার্ক করেন। কিন্তু আপনি নিম্নস্বাক্ষরকারীর নির্দেশনা ভঙ্গ করে এ কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার, শিক্ষা এর নিকট নথি প্রেরণ না করে/অবহিত না করে আপনার দপ্তরে নিয়ে যান, যা একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নিকট কোনভাবেই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২২.০৯.২০১৬ তারিখের ৩৬১ নং স্মারকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করার জন্য অফিস আদেশ জারী করা হয়।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উক্ত বিদ্যালয়ের ০২.০১.২০১১ তারিখের পরিচালনা কমিটির সভায় বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা সংস্কার/মেরামত কাজের জন্য নিম্নবর্ণিত ০৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির রূপরেখা অনুযায়ী আপনার পূর্বসূরী কর্মকর্তাগণ ১৩.০১.২০১৬ তারিখ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত টাকা থেকে প্রায় ৩১,০০,০০০/- টাকার সংস্কার ও মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকার ব্যয় ভাউচার প্রেরণ না করায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকার ২০.০৫.২০২১ তারিখের ৩৮.০১.০০০০.০২০.০২.০২০.২০-১০০১ সংখ্যক পত্রে জেলা প্রশাসক, চাঁদপুরকে ভাউচার প্রেরণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হয়।
আপনি ২৯.০৫.২০১৮ তারিখ হতে ১২.০৩.২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে এবং ১৩.০৩.২০১৯ তারিখ হতে অদ্যাবধি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। আপনার দায়িত্ব পালনের সময় হতে এ পর্যন্ত অত্র বিদ্যালয়ের তহবিলে সংস্কার/মেরামত বাবদ সর্বমোট ৯,৫০,৭১৮.০০/- জমা থাকা সত্ত্বেও আপনি বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেন নি। ফলে বিদ্যালয়ের গুনগতমান নষ্টসহ অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এহেন কর্মকান্ড সম্পূর্ণরূপে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা ও অবহেলার সামিল। উপরন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি থাকা স্বত্তেও আপনি পুনরায় কমিটি গঠনের জন্য ২জন সমাজসেবী মনোনয়নের জন্য নথি উপস্থাপন করেছেন, যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।
বর্ণির্তাবস্থায়, (ক) নিম্নস্বাক্ষরকারী কর্তৃক দুইজন সমাজ সেবী মনোনয়ন না দেওয়ায় কমিটি পুন:গঠন করা সম্ভব হয় নাই- মর্মে অসত্য তথ্য প্রদান, (খ) সহকারী কমিশনার, শিক্ষা শাখা এর নিকট নথি প্রেরণের জন্য আদেশ দেয়া হলেও নথি প্রেরণ না করা, (গ) ভবন নির্মাণ/সংস্কার ও মেরামতের জন্য নির্ধারিত ০৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি থাকার পরও ০২ জন সমাজসেবী মনোনয়নের প্রস্তাব করার বিষয়ে আপনাকে আগামী ০৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। বিষয়টি অতীব জরুরী।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) সাহাব উদ্দিন বলেন, আমাকে জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি চিঠি দিয়েছেন, তার জবাবও আমি পাঠিয়েছি। বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, স্বেচ্চাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আসলে সঠিক নয়। আসলে এ বিষয়ে কথা বলতে হলে আমাকে সকল কাগজপত্র নিয়ে কথা বলতে হবে। আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক ২জরকে ঠিক করে দিবেন। অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে আসলেই যারা জড়িত এটিও বেড়িয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সদস্য সচিব, চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক জনাব মো. সাহাব
উদ্দিন-এর বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, স্বেচ্চাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে ধরে তার বিচারের দাবিতে চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা গত ১০ মার্চ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রতিবেদকঃ শরীফুল ইসলাম,২৫ মে ২০২১