Home / সম্পাদকীয় / শিক্ষার মান বাড়ানোর সাথে গ্রামকেও প্রাধান্য দিতে হবে
Editorial

শিক্ষার মান বাড়ানোর সাথে গ্রামকেও প্রাধান্য দিতে হবে

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম। রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের উন্নয়নের জন্যে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই মানুষ নিজের তাগিদেই সন্তানদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

প্রত্যেক মা-বাবা তার সন্তানকে দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চান। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার চাহিদা রয়েছে। যার ফলে অভিভাবকগণ সন্তানদের জন্য অর্থ ব্যয় করতে কার্পণ্য বোধ করে না ।

কিন্তু নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আজ ওই সন্তানরা শিক্ষার মূলধারা থেকে চূত্যি হয়ে যাচ্ছে। জন্মগতভাবে মানুষ অত্যন্ত দূর্বল প্রাণী। অথচ বুদ্ধিমত্তায় সে শ্রেষ্ঠ ও অন্য প্রাণী থেকে আলাদা । মানুষ একা সব চাহিদা পুরণ করতে পারেনা বলেই সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে।এ সহযোগিতামূলক মনোভাবেই সমাজে শান্তি আসে।

জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই পারিবারিক ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনযাত্রাকে অধিকতর সুন্দর করে তোলাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য।

আমরা দেখছি – দেশের সব এলাকাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার হার, শিক্ষার ব্যয়,শিক্ষার উপকরণ ও শিক্ষার ওপর গবেষণা দিন দিনই বাড়ছে। শিক্ষার মান বাড়াতে সরকারের ঘাটতি দেখছিনা। তবে সেটাকে গ্রাম কেন্দ্রীক আরো বাড়াতে হবে। কেননা দেশের জনগণ কিংবা শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ গ্রামকেন্দ্রিক রয়ে গেছে।

নারী শিক্ষার হার বাড়াতে উপবৃত্তি ও বিনামূল্যের বই বিতরণ কার্যক্রম বিদ্যমান রয়েছে। এটি শিক্ষার মান বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

এ দিকে একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, জুয়া, খুন,ধর্ষণ, গুপ্তহত্যা, গুম, ছিনতাই ও রাহাজানির মতো নানা রকমের সামাজিক অপরাধ।

এসব সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন এ সমস্যাগুলির মূল খুঁজতে হবে এবং সমাধানে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সন্তানদের হাতে বাবা-মা আবার বাবা-মার হাতে সন্তান খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। ঢাকার গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় জাতি ও বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। দেশের শীর্ষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষককের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের বিবেককে আরো তাড়িত করছে ।

এ সব শুধু শিক্ষিতরাই করছে তা’ নয়। এদের উৎপত্তি তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হতে পারে না। এক সময়ে শুনতাম ছিচকে চোর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের উৎপত্তিস্থল ছিল বস্তি বা সমাজের নিচু পরিবার থেকে আসা। কিন্তু এর সাথে ভিন্ন এক পরিস্থিতি যোগ হয়েছে।

এক সময় বলা হতো পানির অপর নাম জীবন। যার অর্থ সব পানিকেই বুঝাতো। আর এখন বলা হয়- বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।

শিক্ষাক্ষেত্রেও শ্লোগান পরিবর্তন করাও সময়ের দাবি। যুগ যুগ ধরেই আমরা শুনে আসছি-শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু সে শিক্ষা আজ আমাদের জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে।

তাই এখন বলতে হবে সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার কারিগররা কী আজ আদর্শ ও সৎ মানুষ তৈরি করতে ব্যর্থ? তাই সমাজের সর্বস্তরের সুশিক্ষার বীজ বপণ করতে হবে ।

ছোটবেলায় আমরা মক্তবে যে শিক্ষা পেয়েছি তা আজও হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। আধুনিকতার ছাপে সে শিক্ষা আজ অনেকটাই ওঠে গেছে । শুধু পাশের কথা ভেবেই অনেক শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে যাচ্ছে।

শিক্ষার্থীর হৃদয়-মন যাতে সুন্দর হয়, জাতীয় চেতনা ও মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়; সেদিক লক্ষ্য রেখে সিলেবাস ও পাঠদান পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সাথে স্ব স্ব ধর্মীয় শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সৎ ও আদর্শবান শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার মূল ধারা ঠিক রাখতে হবে। ভালো মেধাসম্পন্ন শিক্ষকদেরকে গ্রামের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে।

তাহলেই গ্রাম ও শহরে একত্রে শিক্ষার মান বাড়তেই থাকবে। দেশ ও জাতির মননশীলতা আরো বেশি উন্নত হবে। আমরা হয়ে উঠবো এক সমৃদ্ধ জাতি।

সম্পাদকীয় : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:৫০ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply