সারাদেশে কোভিড -১৯ এর মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে অবশেষে খুলল চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের পদচারনায় মুখরিত হলো প্রতিতষ্ঠান গুলো।
দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর আবারও খুলেছে জ্ঞানের দুয়ার।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালেই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের জন্য। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভয় ও শঙ্কাকে পেছনে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে হাজির হয় শিক্ষার্থীরা।
আবারও বেজে ওঠে স্কুলের ঘণ্টা। এ যেন প্রাণের স্পন্দন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা এক এক করে স্কুলে ঢোকে। এরপর দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসরুমে বসানো হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছসিত হয়ে ওঠে। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে।
রবিবার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিতষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন ক্লাস করছেন। এসম তাদের মাঝে প্যাণচাঞ্চণ্য দেখা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পেরে উচ্ছসিত আর আনন্দে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে বসতে পেরে জানিয়েছে সুখকর অনুভূতির কথা। রবিবার সকাল থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরেজমিনে মনিটরিং করতে দেখা গেছে।
ছেংগারচর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদেরকে মাস্ক পড়ে, হাত ধুয়ে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে শ্রেণিকক্ষে বসতে হচ্ছে। এরপরও দীর্ঘদিনের ব্যবধানে স্কুলে ফিরতে পারায় তারা খুব খুশি। দূর থেকে হলেও সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়া পিছিয়ে পড়ার যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেল। এভাবে নিয়ম মেনে ক্লাস না হলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে মন্তব্য করে এই শিক্ষার্থী।
তবে ক্লাসে ফেরার আনন্দ কেবল শিক্ষার্থীদেরই নয়; সমানভাবে উচ্ছসিত শিক্ষকরাও। দীর্ঘ সময়ের করোনা মহামারিতে নিম্নমুখী হওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আবারও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরতে পারার ভিন্ন অনুভূতির কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরাও। শিক্ষকরা বলছেন, মহামারি পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরছেন তারা। ক্লাসে ফেরার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমিতা, হতাশা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।
উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানান, দীর্ঘ দিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসতে পেরে খুব খুশি। অনেক দিন পর শিক্ষক ও তাদের বন্ধুদের পেয়ে তাদের কাছে মহা আনন্দের মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস শুরু করেছি। তিনি জানান, ক্লাসে প্রবেশ করার আগে তাপমাত্রা মাপক যন্ত্র দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের মাক্স বিতরণ করেছেন, এবং প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়েছেন।
ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোসাইন মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুশৃংখলভাবে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে পাঠদান। তবে প্রথম দিন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন করা হচ্ছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে সময় উপযোগী বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর এজন্য সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস শুরু করেছি। ক্লাসে প্রবেশ করার আগে তাপমাত্রা মাপক যন্ত্র দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের মাক্স বিতরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ভুইয়া জানান, সকালে বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লাস দেখতে পেয়েছি।
আমরা সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাশ পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ এক যোগে ক্লাস শুরু হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক