কলেজের আলোকিত মুখ তিনি। তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ শিক্ষার্থীরা। বিপদে-আপদে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে তাঁকে পাওয়া যায় সবসময়। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি কেবল একজন শিক্ষকই নন, তিনি একজন ভালো বন্ধুও।
তাই তিনি কারো কাছে প্রিয় শিক্ষক, কারো কাছে অভিভাবকতুল্য মানুষ। কলেজটির শিক্ষকদের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। কলেজের এমন শিক্ষার্থী কম খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা তাঁকে চিনেন না।
বলছিলাম চাঁদপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কিউএম হাসান শাহরিয়ারের কথা। শিক্ষার্থী মহলে তিনি ‘শাহরিয়ার স্যার’ নামে অধিক পরিচিত। কিউএম হাসান শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম ব্যাচের ছাত্র তিনি। একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ২০০৩ সালে এমবিএ করেন।
শিক্ষকতা পেশায় কেন এলেন? প্রশ্ন করতেই তিনি হাসেন। বলেন, আমি আগে ব্যাংকে একবছর কাজ করেছিলাম। কিন্তু মনে হলো এখানে থেকে সমাজের জন্যে কিছুই করতে পারবো না। আমার শিক্ষাজীবনের ব্রত ছিলো, আমি নিজের জন্যে যেমন কিছু করবো। তেমনি মানুষের জন্যেও কাজ করবো। সেই চিন্তা থেকেই ২০০৫ সালে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হই। শিক্ষকতা পেশায় ভালো আছি। যখন দেখি কোনো শিক্ষার্থী ভালো করছে, তখন বিষয়টা আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। ভালো লাগে এই ভেবে যে, আমি হয়তো শিক্ষার্থীদের জন্যে কিছু করতে পারছি।
একটানা কথা বলে তিনি একটু নীরব থাকেন। সেই সুযোগে তাঁকে বলিÑ বলতে গেলে তের হাজার শিক্ষার্থী সমৃদ্ধ এ কলেজের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষক আপনি। এই কথাগুলো শুনে জবাবে তিনি শিশুসুলভ হাসেন। হাসি ঠোঁটে জিইয়ে রেখেই বলেন, আমি কেবল শিক্ষার্থীদের সাথে থাকার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীদের সাথে মিশেছি। তাদের ভালোমন্দ জানার চেষ্টা করেছি। কারো কোনো প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছি। পরামর্শ দিয়েছি। কে কোন বিভাগে পড়ে সেদিকে তাকাই নি। সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন। শিক্ষার্থীদের অফুরান ভালোবাসা প্রাপ্তি আমার জীবনের বড় এক প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে বলি। আমি বলি, তোমরা কোথায় যেতে চাওÑসেই স্বপ্নটি আগে দেখো। তারপর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে পরিকল্পনা করো। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। কঠোর পরিশ্রম করলে মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবেই। আমি আরও বলি, নিজের ভবিষ্যত অন্য কেউ এসে সুন্দর করে দিয়ে যাবে না। নিজের জীবন নিজেকেই গড়ে তুলতে হবে।’
স্মরণীয় স্মৃতির সম্পর্কে হাসান শাহরিয়ার বলেন, অনেক ঘটনা আছে স্মরণীয়। একবার আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড জ্বর। সেদিন আমার এক ছাত্র, নাম সুমন ও সারারাত আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। রাত জেগে আমার সেবা করেছে। পরের দিন সে আমাকে আবার ঢাকায় পৌঁছে দিয়ে এসেছে।’
শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে কিউ এম হাসান শাহরিয়ার ব্যবস্থাপনা বিষয় সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবইও লিখছেন। এ পর্যন্ত তাঁর কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্যে তাঁর লেখা ‘ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা’, ‘ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বীমা’Ñএই বইদুটো প্রকাশ ২০১০ ও ২০১২ সালে প্রকাশ করে মিলিনিয়াম পাবলিকেশন্স। সম্মানে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের জন্যে সিবিও পাবলিকেশন্স থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’, ‘শিল্প সম্পর্ক’, ‘বিজনেস কমিউনিকেশন এন্ড রিপোর্ট রাইর্টিং’ বইগুলো শিক্ষার্থীপ্রিয়তা পেয়েছে। সর্বশেষ এ বছর ¯œাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্যে তাঁর লেখা ‘ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা’ বইটি প্রকাশ করে মিলিনিয়াম পাবলিকেশন্স।
পাঠ্যপুস্তক লেখা নিয়ে প্রশ্ন করলে এই গুণী শিক্ষক বলেন, আমি চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পাঠের বিষয়গুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে। যাতে তারা সহজেই বুঝতে পারে। আমি অনার্সের শিক্ষার্থীদের জন্যে আরো কিছু বই লিখবো। ‘ব্যবসায় গণিত’, ‘সাংগঠনিক আচরণ’Ñএ দুটি বই আগামী বছর প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাই আমার বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তারা পাঠ্যপুস্তক লেখার জন্যে আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করছে। ’
আগে গল্প কবিতা লেখার শখ ছিলো হাসান শাহরিয়ারের। একসময়ে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে লিখতেন তিনি। অবসর পেলেই বই পড়তে ভালোবাসেন। বর্তমানে চাঁদপুর জেলার ইতিহাস সংক্রান্ত একটি বই পড়ছেন। সময় পেলে আবারও সাহিত্যচর্চা করার ইচ্ছে আছে তাঁর।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৩৩ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ