চাঁদপুরের হাইমচর নীলকমল উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের দিয়ে পিরামিড তৈরি করতে গিয়ে ঘটেছে এক অমানবিক কান্ড।
শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ‘পদ্মা সেতু’ পিরামিডের উপরে যখন প্রধান অতিথি হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী উঠেন ওই ছবি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেন উপস্থিত অনেকেই।
মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সরেজমিন হাইমচর নীল কমল উচ্চ বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে কথায় হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেনের সাথে।
তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘১৯২৮ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা দু’পাশে দাঁড়িয়ে এবং মাঝখানে কয়েকজন ছাত্রকে শোয়া অবস্থায় রেখে ব্রিজ তৈরি করেন। আর এই ব্রিজে ছাত্রদের শরীরের উপর দিয়ে প্রধান অতিথি পায়ে হেঁটে ব্রীজ পার হন। এই ধরনের পিরামিড ওই বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য।’
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘গত ২০১৪ সালে ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন তিনিও এই ধরনের পিরামিডের উপর দিয়ে পায়ে হেটে পার হয়েছেন। যারা ছবি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছবি বোর্ডে লাগানো রয়েছে। এছাড়াও হামইচর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ২০০৩ সালে এই ধরনের পিরামিডের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হন। এ ধরনের পিরামিড তৈরী কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) আবার উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারীর সম্মানে শুরু হয়েছে।’
এই বিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস। তিনিই শিক্ষার্থীদের এ ধরনের পিরামিড তৈরি করার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি এবং তার ফোন নম্বর দিতে কেউ রাজি হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মো. ইমরান হোসেন চাঁদপুর টাইমসকেব বলেন, ‘২০০৬ সালে আমি এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার জানামতে নিয়মিত না হলেও ১৯৮৬ সাল থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ ধরনের আয়োজন ছিলো। পূর্বে বিষয়টি জানাজানি না হলেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এই ধরনের আয়োজন করেন।’
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শোয়রাব হোসেন ও নবম শ্রেনীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার ওই পিরামিডের উপর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদেরকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। তারা এই বিষয়টিকে প্রতিযোগিতা অংশই মনে করেন এবং আনন্দ উপভোগ করেন।’
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বাশার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘পূর্বে এই বিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রচলন থাকলেও এখন আর প্রয়োজন নেই। পিরামিড তৈরি করে যে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা অতিথিদের সামনে তুলে ধরতেন, সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন এই উপজেলার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালবার্ড অনেক তৈরী হয়েছে। এই ধরনের আয়োজনকে নিন্দা জানাই।’
হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার পর আমাকে অন্যান্য অতিথি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেকটা জোর এবং চাপ প্রয়োগ করে করে পিরামিডের উপর দিয়ে হেটে যেতে বাধ্য করেছে। আমার বিবেকে বাঁধা দিলেও বিদ্যালয়ের নিয়ম রক্ষায় নিষেধ করতে পারেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অনেক কথা হচ্ছে, পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয়ে এই ধরনের আয়োজন বন্ধ করার ব্যবস্থা করবো।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আব্দুল হাই চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন এর সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, বাচ্চাদের গায়ের উপর দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়া তার বিবেকে বাধা দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিদের অনুরোধ এবং চাপে পড়ে তিনি হেটেছেন। তবে তিনি না হেটে কোন শিক্ষার্থী হেঁটে যাওয়াটাই ছিলো উত্তম, বিষয়টি মানবিক হয়নি।’
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। যদি কোন জনপ্রতিনিধি এই ধরনের কাজ করে থাকেন, এটি সত্যই বড় অমনাবিক। আমি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য লোক পাঠিয়েছি। তদন্তে প্রমাণ হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির আগে প্রকাশিত প্রতিবেদন- নীলকমল ওছমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরস্কার বিতরণ
ভিডিওটিতে দেখতে ক্লিক করুন..
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭: ৩০ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ