শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যতিক্রর্মী দেশজ সবজি উৎসব

শিক্ষার্থীদের স্কুল বেঞ্চে সাজানো সারি সারি সবজির ডালা। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশীয় সবজি। এসব সবজির নাম এবং বিভিন্ন গুণাগুণ তুলে ধরছে কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থীর চেনা এবং জানা সবজি সম্পর্কে অপর শিক্ষার্থীকে অবহিত করছে। ২৭ জানুয়ারি সোমবার চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী দেশীয় সবজি উৎসব।

শিশুদের দেশীয় সবজির প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকারক চটকদার খাবার থেকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যতিক্রমী এক উৎসবের আয়োজন করেছে চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুল। ‘বেশি বেশি সবজি খাও, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে মেধাবী হও, কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়াও’ এ স্লোগানকে ধারণ করে আয়োজিত উৎসবে প্রায় ৩০ টির অধিক দেশীয় সবজি নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে, বরবটি, শিম, মটরশুটি, ফুলকপি, ব্রকোলি, কুমড়া, কুমড়া ফুল, কাঁচা কলা, কলা গাছের আইলকা, বিভিন্ন প্রজাতির শাক, ধনে পাতা, লেটুস, বাঁধাকপি, সজিনা পাতা, লাউ, থানকুনি, গাজর, মূলা, শালগম, বিট, গোল আলু, মেটে আলু, পেঁপে, টমেটো, বেগুন, চাল কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঢেড়শ, পটল, শশা ইত্যাদি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিন্ময়ী, মেহজাবিন, তাসরিক আরাফ, অয়ন মজুমদারসহ অন্যরা বলেন, ‌এ উৎসব আয়োজনের ফলে তারা অনেক সবজির সাথে পরিচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব সবজির গুণাগুণ সম্পর্কে নিজেরা জেনেছে এবং অপরকে জানাচ্ছে। ‌সব মিলিয়ে এ আয়োজনটি তাদের অনেক ভালো লেগেছে।

বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, এমন উৎসবের সাথে তারা এবং ‌শিক্ষার্থীরা আগে কখনো পরিচিত ছিল না। তাছাড়া আমাদের সন্তানরা একসাথে এত সবজি কখনো দেখেওনি। এই উৎসবের মাধ্যমে শিশুরা এতগুলো সবজি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এতে করে শিশুরা সবজি খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।

চাঁদপুর ল্যাবরেটরী স্কুলের উপাধ্যক্ষ মৃদুল কান্তি দাস, সহকারী শিক্ষক নাজনীন হোসাইন, নুসরাত জাহান বলেন, বাংলাদেশে আর কোথাও এভাবে সবজি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে চাঁদপুরে আমরাই প্রথম সবজি উৎসবের আয়োজন করেছি। ব্যতিক্রমী সবজি উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। ‌একসাথে এত সবজি দেখে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় সবজি চিনতে এবং জানতে পেরেছে।

চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি দাস বলেন, সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। অথচ আমাদের শিশুরা দিনে দিনে চটকদার খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। তারা দেশীয় মাছ, সবজি, ফল খাওয়া থেকে সরে আসছে। অথচ দেশীয় এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ঔষধি গুনাগুন থাকে। যা শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। তারা যেকোনো ধরনের বিদেশি খাবারকেই বেশি পুষ্টিকর মনে করে। কিন্তু দেশীয় শাক–সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ। আর এসব শাকসবজি বা তরকারি আমাদের একেবারেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বর্তমানে বেশিরভাগ সবজিই বছরের বারো মাস পাওয়া যায়। ‌এসব দেশীয় সবজি হতে পারে আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টির এক অনন্য উৎস। মূলত এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের সবজির প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য থেকে নিরুৎসাহিত করতে এ আয়োজন করা হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সিনিয়র শিক্ষক মাসুদুর রহমান,সাংবাদিক ও লেখক মনিরুজ্জামান বাবলু,সাংবাদিক কবি ও গল্পকার আশিক বিন রহিম,চাঁদপুর ল্যাবরেটরী স্কুলের সহকারী শিক্ষক,বিথি কর্মকার, সুমি শীল, নুসরাত জাহান, তানজিলা আক্তার,পূর্ণিমা দাস, কাকলি দাসসহ সকল শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকগণ।

চাঁদপুর টাইমস
২৭ জানুয়ারি ২০২৫
এজি