কচুয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের অভিযোগ পওেয়া গেছে। করা হয়েছে। ২০ নভেম্বর শনিবার উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের শিক্ষক রুমে এই ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, কলেজের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইমতিয়াজ সাকিব (২২) এবং তার সহপাঠী বন্ধু আফজাল মুন্সি (২১)। বর্তমানে তারা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মাথায় এবং চোখের উপর ভাগসহ শরীদের বিভিন্ন স্থানে দিয়ে পিটিয়ে হাড়-মাংস থেতলে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুত চলছে বলে জানা গেছে।

আহত ইমতিয়াজ সাকিব জানায়, ‘আমি বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ থেকে পাশ করে ঢাকা-৭ কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এই জন্যে খুশিতে আমার শিক্ষক- সহপাঠীদের সাথে দেখা করতে শনিবার দুপুরে কলেজে যাই। পরে কলেজ থেকে বের হতে গেলে, শাওন (২০) গেইট আগলে দাঁড়ায়। সেই ওই কলেজের ছাত্র নয়। আমরা তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে সে গায়ে পড়ে ঝগড়া শুরু করে। বিষয়টি আমরা কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহাদাত স্যারকে জানালে তিনি আমাদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষক রুমে বসতে বলেন।

ইমতিয়াজ সাকিব আরও জানায়, এরপর হঠাৎ করেই মেয়রের ভাই খোকন মিয়া, তার ছেলে শাওন, মেয়রের ছেলে ফাহিম, ভাগিনা মাহিম এবং তাদের সহযোগী শাহাদাত, সাব্বির, জাকির, তানভীর, রাজু আমাদের ওপর হামলা চালায়। প্রায় ১০/১৫ জন হাতুড়ি এবং লোহার রড দিয়ে আমাদের মাথায় ও হাতে-পিঠে আঘাত করে। আমরা ডাক-চিৎকার করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাদের এমন হামলায় আমরা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাই পরে কয়েকজন ছাত্র আমাদের উদ্ধার করে কচুয়া হাসপাতালে ভর্তি করায়।

আহত ইমতিয়াজ সাকিবের মা স্কুল শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার রত্না জানান, আমার স্বামী আওয়ামী লীগ করেন। তিনি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন। এ অপরাধে মেয়র স্বপন ও তার ভাই খোকনের লোকজন আমার ছেলেকে মারধর অভিযোগ করেছেন তিনি। সবশেষ কলেজের শিক্ষক রুমে আশ্রয় নিলেও আমার ছেলে রক্ষা পায়নি।

স্কুল শিক্ষিকা ফারজানা বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুর রহমান ৭১ সালে সর্বপ্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন পতাকা উড়িয়েছেন। আমি নিজে একজন স্কুল শিক্ষিকা। এর আগে আরেকবার আমাকে পিটিয়ে আহত করছে। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। সেদিনের ঘটনায় আমি কচুয়া আমলী আদালতে মামলা করেছি। বর্তমানে মামলাটির ডিভিশন চলছে। যার মামলা নং, ৩৬/২১, সিআর ২৬৭/২১। আমি একজন নারী, শিক্ষক এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দিলাম।

আহত ইমতিয়াজ সাকিবের পিতা, কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহসান হাবীব প্রাঞ্জল বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কচুয়া পৌরসভা নির্বাচনে আমি মোবাইল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এই কারণে মেয়র স্বপনের এবং তার লোকজন দফায় দফায় আমার পরিবারের উপর হামলা করছে। তারা আমার মেধাবী ছেলেটিকে কলেজের শিক্ষক রুমে রেখে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসনের কাছে সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আহত অপর শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন মুন্সির পিতা আবু তালেব মুন্সি জানান, আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমার মেধাবী ছাত্রকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। আমার ছেলেটা ঢাকা কলেজে ভর্তি পরিক্ষায় পাশ করেছে। ওরা আমরা ছেলেটাকে নির্মমভাবে মেরেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, ইমতিয়াজ সাকিব ও তার বন্ধু আফজাল মুন্সি কলেজের গেট পার হওয়ার সময় শাওন নামের যুবককে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া সৃষ্টি হয়। এরপর ইমতিয়াজ শাকিব ও আফজাল শাওনকে পিটিয়ে তার চোখ রক্তাক্ত জখম করে। এরপর শাওনের পরিবারের লোকজন এসে তাদের ওপর হামলা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ ফেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, আশিক বিন রহিম, ২১ নভেম্বর ২০২১

Share