জাতীয়

শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনার জবাব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বুধবার সচিবালয়ে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী বাছাইয়ে ফুটপাত থেকে অখ্যাত লেখকদের বই কিনে তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর এ সমালোচনার জবাব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্যরা।

প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। এখানে প্রশ্ন প্রণয়নে নিখুঁত প্রক্রিয়ার সুনাম সারা দেশে আছে। এইচএসসি পাশ একজন শিক্ষার্থীর মেধার মান অনুযায়ীই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন করা হয়। আমি শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যে অত্যন্ত ব্যথিত হলাম। তিনি না জেনে-শুনে এমন অবান্তর একটি মন্তব্য কীভাবে করলেন, তা আমার বোধগম্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এটি মনে রাখতে হবে শুধু পাশের হার বৃদ্ধি পেলেই শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন ভাবা ঠিক নয়।’

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের মেনে নিতে কষ্ট কোথায় যে, নিচের লেভেলে (এসএসসি ও এইচএসসি) শিক্ষার মান বাড়েনি। আমাদের কৃষিতে আগে মান ছিল না। বিষয়টি মেনে নিয়ে সরকার যখন এর উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন ঠিকই এর সুফল দেখা যাচ্ছে। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পূর্ণ বিরোধিতা করে বলছি, আপনারা শুধু পাশের হার না বাড়িয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাক বা না পাক অন্তত এভাবে ফেল হবে না।’

নাসরিন আহমাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত একটি বিশাল অংশকে যদি বলা হয়, বাবা, একটি ছুটির আবেদন বা চাকরির আবেদন লিখ ইংরেজিতে। আমি হলফ করে বলতে পারব, তারা সঠিকভাবে লিখতে পারবে না। তাই বলছি, শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া বেকার তৈরি না করে প্রকৃত মেধাবী তৈরি করুন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় একটি কারিকুলামের মধ্য দিয়ে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ একজন শিক্ষার্থী উত্তর দিতে পারে, এমন প্রশ্নই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় করা হয়। এখানে কাউকে পাশ-ফেল করানো আসল কথা নয়। আসল কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে এক ধরনের ছাঁকনি। ছাঁকনি দিয়ে প্রকৃত মেধাবীকে নেওয়া হয়। এ কারণে ছাঁকনিতে একটি বিশাল অংশ ঝড়ে পড়ে যায়। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী নয়।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো কথা বলার আগে অবশ্যই যে কাউকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বক্তব্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই সবাইকে উদার মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের বছরে আসন খালি থাকে ৬ থেকে ৭ হাজার। সেখানে ভর্তি পরীক্ষা দেয় ৩ লাখের ওপর। আমরা চাইলেও সবাইকে নিতে পারি না। তাই অটোমেটিক একটি বিশাল অংশ বাদ পড়ে যায়। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রণয়ন কমিটি। এটি একটি কারিকুলামের মধ্য দিয়ে করা হয়। যা এ পর্যন্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কোনো শিক্ষার্থী নিচের লেভেলে যদি গ্রামার, সাহিত্য, মেইন বই, বর্তমান বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে, এসবের ওপর গুরুত্ব দেয়, তাহলে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করাটা খুব একটা কঠিন নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন প্রণয়নে যে স্বচ্ছতা আছে এবং এর যে একটা মান আছে দেশব্যাপী তা স্বীকৃত। এ প্রক্রিয়া নিয়ে কে কী বলেছে, সেটি দেখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্রণয়ন করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন প্রণয়নে একটি প্রক্রিয়া আছে। যেখানে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা মেইনটেইন করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এইচএসসি পাশ করা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে সেটি হিসেব করে আমাদের প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। এটি একটি বাছাই প্রক্রিয়া। ৩ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে। সেখানে আমরা ৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী নেব। আমরা ৩ লাখ থেকে বাছাই করে ৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী নেব। আমাদের এ বাছাই প্রক্রিয়াটা হলো ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ইংরেজি ও বাংলায় যে মার্ক পেয়ে থাকে তাতে বোঝা যায় এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ভাষা শেখার ওপর আরো গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ভাষার শেখার জন্য যা যা করা দরকার সেটি করা, ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রভৃতি বিষয়ে মানোন্নয়ন প্রয়োজন।’

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য : বুধবার সচিবালয়ে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি সিটের বিপরীতে ৪০ জন আবেদন করেছে। ওখানে পাস-ফেলের ব্যাপার নাই। এক ঘণ্টায় তারা একটা বাছাই করছেন কী করে ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া যায়। ৩৯ জনকে বাদ দেওয়ার জন্যই এ ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ইংরেজিতে শুধু তিন জন ভর্তি হয়েছে। শেষপর্যন্ত তারা সব আসনই পূর্ণ করেছেন। আমাদের এসএসসি ও এইচএসসিতে যে হারে জিপিএ-৫ পায় তার চেয়ে বেশি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে যাচ্ছে ওসব ছেলেমেয়েরা, তারা যাদের বলছেন ফেল।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘একজন শিক্ষক বলেছেন, নীলক্ষেতের ফুটপাতে অনেক বই বিক্রি হয়- গান, জারি, নাচ, ছড়া, কবিতা- নানান ধরনের বই। তারা নিজেরাও দেখেন না এসব বই। ওইসব জায়গা থেকে তারা কয়েকটি বই তুলে নিয়ে আসেন। এনে প্রশ্নের মধ্যে তুলে দেন ওই বইয়ের লেখক কে? তারাও জানেন না। কেন দেন? তাদের তো উদ্দেশ্য পাস-ফেল না। উদ্দেশ্য হল ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া এবং একজনকে রাখা। সেই হিসেবে এটা পাস-ফেলের প্রশ্ন নয়, এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।’

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:০০ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share