Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন মশা তৈরির কারখানা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

হাজীগঞ্জে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন মশা তৈরির কারখানা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে এ বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও ভবনগুলোর চারপাশে ময়লা-আবর্জনা এবং ঘাস, লতা-পাতাসহ আগাছা জন্মানোর ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জ্ঞানের আলো ছড়ানোর পরিবর্তে মশা তৈরির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর এতে ডেঙ্গু মশার আতংকে আশপাশের মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

দেশে করোনা মহামারির কারণে গত প্রায় ১৭ মাস যাবৎ প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনুষ্ঠানিক পাঠদান বন্ধ থাকায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা। তবে বেশিরভাগ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস কার্যক্রম চলমান থাকলেও স্কুলের পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়নি। অথচ সকল প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সবার হাতে ব্যাপক ও বেকার সময় থাকলেও, প্রতিষ্ঠান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সময় যেন কারো হাতেই ছিল না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কার হাতে।

সম্প্রতি হাজীগঞ্জের বাকিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, ছালেহ আবাদ এম.এন ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়, বলাখাল এম.এন.এম ফাজিল মাদরাসা, বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, বলাখাল জে.এন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ, বলাখাল চন্দ্রবাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেলঁচো মাদ্রাসা, পালিশারা স্কুল, হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, তারালিয়া জনতা কলেজসহ উপজেলার বেশিরভাগ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) এমন চিত্র দেখা গেছে।

বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, হাটা চলা না থাকায় মাঠের ঘাস বড় হয়ে গেছে। অতি বৃষ্টিতে চারপাশের পানি জমে পরিবেশের কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা থেকে নির্দশনা দিয়েছে বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর রাখতে। আমরা সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।

হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয় কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন বলেন, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের কাজ হচ্ছে পরিবেশ ঠিক রাখা, কিন্তু এসব দেখার মত যেন কেউ নেই। যে কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ বেহাল চিত্র সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে গত ২৫ জুলাই পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মনিটরিং করাসহ প্রতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাজীগঞ্জের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে ও হচ্ছে।

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠ এবং ভবনগুলোর মধ্যে পানি জমে থাকে এমন জায়গা, ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজননকেন্দ্র। ডেঙ্গুর বিস্তাররোধে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ লক্ষে দেশের প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে খেলার মাঠ ও ভবনগুলো পরিষ্কার রাখা, মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে বলেছে।

এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ও শ্রেণিকক্ষের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতের জন্য পরিচ্ছন্ন ব্যাগ, টিফিনবক্স ও পানির পাত্র ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করবেন শিক্ষকরা।

শ্রেণিকক্ষের সামনে ময়লা-আবর্জনার বিন রাখা ও ক্লাসরুমের চেয়ার-টেবিল-ব্ল্যাকবোর্ড পরিস্কার রাখতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলে ও মেয়ের জন্য পৃথক ওয়াশব্লকের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একাধিক মনিটরিং টিম থাকবে। খেলার মাঠ পরিস্কার ও খেলাধুলার উপযোগী রাখতে হবে। বিদ্যালয়ের দেয়ালে নীতিবাক্য ছাড়া অন্য দেয়াল লিখন বন্ধ করতে হবে। স্থান থাকা সাপেক্ষে মৌসুমি ফুলের বাগান করতে হবে।

অথচ উপরোক্ত নির্দেশনার (পরিপত্র) আলোকে উপজেলার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে চিত্রই ভিন্ন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিস্কার-পরিচ্ছনতাসহ যে কোন মূহুত্বে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি রাখার জন্য উপজেলার ১৫৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষকদের সাথে র্ভাচ্যুয়ালি সভায় এ নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারী বক্তব্য রেখেছি। এ ছাড়াও নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমাদের কর্মকর্তাগণ (সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা) বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করবেন।

অপর দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিপত্রের আলোকে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ব্যতয় ঘটলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৩ আগস্ট ২০২১