Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে কাল শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণ
Training ...
প্রতীকী ছবিটি ওয়েবসাইড থেকে নেয়া

চাঁদপুরে কাল শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণ

চাঁদপুরসহ সারাদেশে কাল শুক্রবার ৬ জানুয়ারি শুক্রবার ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষকদের ৫ দিনের নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ । এ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা শুরু করতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। চাঁদপুরের সকল উপজেলায় এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে । এটি ৫ দিনব্যাপি প্রথম ব্যাচ ।

সারা বাংলাদেশে একই নিয়মনীতিতে একই সময়ে ও নির্দেশনায়‘ শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণ’ নামের ওই কর্মসূচিতে দেশের সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা বিভাগের সূত্রে আজ ৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানা গেছে ।

চাঁদপুরের সকল উপজেলা সদরে স্ব স্ব উজেলাভিক্তিক এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষককেই এপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। প্রশিক্ষণ কোর্সটি এমনভাবে নেয়া হয়েছে কোনো অবস্থাতেই শ্রেণি কার্যক্রমের ব্যাঘাত না ঘটে সরকারি নিদের্শনা মতে সেভাবেই কোর্স পরিচালিত হবে।

শুক্র ও শনিবার প্রথম এ দুদিন হবে বাকি ৩ দিন পরের সপ্তাহে চলবে। চাঁদপুর জেলার ২৯৩ টি মাধ্যমিক স্কুলের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক -শিক্ষিকাগণ এ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে।

২৭-৩১ ডিসেম্বর ৫ দিনের এ প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমে কী কী থাকছে, কী কী করতে হবে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি কিরকম হবে- এ তিনটি বিষয় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সারাদেশের ১৭ হাজার শিক্ষককে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘মাস্টার ট্রেইনার’ করা হয়েছে। তাঁরাই এখন জেলায় জেলায় শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। চাঁদপুরেও এ প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়েছে ।

প্রসঙ্গক্রমে যতদূর জানা গেছে – উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষকদের না বোঝার কারণে ১০ বছর আগে শুরু হওয়া সৃজনশীল পদ্ধতির পড়াশোনা খুব একটা সুফল বয়ে আনেনি। মুখস্থবিদ্যা থেকে বের হওয়ার জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি আবিষ্কার করা হলেও সেটি নোট-গাইডনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়ে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি কতটা কার্যকর করা যাবে- বলে মনে করা হচ্ছে । নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে ‘হাতে-কলমে’ শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নতুন এ শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হবে না,কোচিংয়ে যেতে হবে না। এমনকী গৃহশিক্ষকেরও দরকার পড়বে না।

এতে বেশির ভাগ শিক্ষকের কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয় । নতুন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকরা তেমন একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন না।

নতুন শিক্ষা পদ্ধতি অনেক কঠিন ও জটিল। বক্তৃতানির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এর ফলে শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন কোনো কিছু শুরুর সময় সংকট হবে,ধাক্কা খেতে হবে। ধাক্কা খেতে খেতেই ঠিক হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূল্যায়ন ও পড়াশোনার ধরনে বড় পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রম আগামি বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোপুরি চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে।

২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে চালুর মধ্য দিয়ে পুরোপুরিভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে। প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা হবে না। এ পর্যায়ে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে।

যা আছে নতুন বইয়ে

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ে ১০টি বই থাকবে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪ টি বই পড়ানো হয়। আর নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ৮টি বিষয় ঠিক করা হয়েছে।

এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে সব বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা বই পাবে না। কিছু বই ‘শিক্ষক গাইডের’ আলোকে পড়ানো হবে। এত দিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আনন্দ পাঠ, বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত এবং চারুপাঠের মাধ্যমে মূলত বাংলা বিষয়টি পড়ানো হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলায় একটি বই থাকবে। বইয়ের নাম ‘বাংলা’।

শিক্ষার্থীরা যাতে প্রমিত বাংলা ভাষায় ভালোভাবে যোগাযোগ করতে শেখে,সেটি মাথায় রেখে বইটি লেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যাতে ভাষাদক্ষতা বাড়াতে পারে, সেজন্য কিছু কৌশল এবং কাজও যুক্ত করা হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে এত দিন কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা পড়ানো হতো। এখন‘জীবন ও জীবিকা’ নামে নতুন বইয়ে অনেক কিছুই হাতে-কলমে শেখানোর বিষয়বস্তু রয়েছে। যেমন এ বইয়ের ‘কাজের মাঝে আনন্দ’ অংশে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের বিছানা পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন বাস্তব বিষয় শেখানোর কথা রয়েছে।

আবদুল গনি
চাঁদপুর টাইমস
৫ জানুয়ারি ২০২৩
এজি