শিক্ষক সমিতির ২৩ লাখ টাকা উৎকোচ : শিক্ষার্থীদের হাতে নিন্মমানের বই

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে নিম্নমানের বই বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একাডেমিক বুক হাউজ নামের একটি বই কোম্পানীর কাছ থেকে শিক্ষক সমিতি ডোনেশনের নামে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বইগুলো মান সম্মত নয় এবং অস্পষ্ট ছাপা।

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, শিক্ষক সমিতি কিছুদিন পূর্বে ঝিনাইদহের পূর্বালী ব্যাংক থেকে বই কোম্পানীর অগ্রিম পাঠানো ডোনেশনের নামে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ উত্তোলন করেছে বলে জানা গেছে। বাকি টাকা চলতি বছরের জুন জুলাই মাসে পরিশোধ করবে বই কোম্পানী।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক বুক হাউজের “একাডেমিক স্পেশাল ইংলিশ গ্রামার এন্ড কমপোজিশন এবং “একাডেমিক বাংলা ব্যাকারণ ও বহু নির্বাচনী ও নির্মিতি” বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে এসব নি¤œমানের বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। উক্ত কোম্পানীর বই মান সম্মত নয়। মূলত উক্ত বই কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এ বই হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশ ঘটবে না বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক মহল ও সচেতন জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, ১শ টাকার বইয়ের মূল্য ধরা হয়েছে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। প্রতিটি বই তাদের এত দাম দিয়ে বাধ্যতামূলক কিনতে হচেছ। কোম্পানীর কাছ থেকে টাকা খেয়ে শিক্ষকরা এসব বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তি করাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে সিলেবাসে একাডেমিক বুক হাউজের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার বই কিনতে বাধ্য করাচ্ছেন। এছাড়া সরকার ছাত্র-ছাত্রী সব বই দিয়েছে। যদি কোন শিক্ষার্থী সহায়ক হিসেবে কোন বই কিনতে চায় তাহলে সে তার ইচ্ছামত যেটি ভাল সেটি কিনতে পারবে। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের এসব প্রতিবাদেও কোন ফল হচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বাধ্যতামূলকভাবে সিলেবাসে একাডেমিক বুক হাউজের বই অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রেজাউল ইসলাম বই কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আর কথা বলেননি।

ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা জানান, ‘সমিতির যারা সভাপতি ও সেক্রেটারি আছেন তারাই এটি করে থাকেন। আমি তো সমিতির কোন দায়িত্বশীল পদে নেই। তারা আমাদের একটি বুকলিস্ট দিয়েছে সেই বুকলিস্টই আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়েছি। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম এ আরিফ সরকার জানান, ‘উপজেলা শিক্ষক সমিতি দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে ডোনেশনের নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব বই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বাধ্যতামূলক তুলে দিচ্ছেন। এতে আমার কিছুই করার নেই।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, ‘সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের সকল বই দিয়েছে। নোট বই বা কোম্পানীর অন্য কোন বই বাধ্যতামূলক তাদের পড়ানো যাবে না। যদি এটি করা হয় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জাহিদুর রহমান তারেক, ঝিনাইদহ করেসপন্ডেন্ট

: আপডেট ৭:০০ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সোমবার

ডিএইচ

Share