খেলাধুলা

শাহাদাত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ৫ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ

সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন। সোমবার জাতীয় ক্রিকেট লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে সতীর্থ আরাফাত সানি জুনিয়রকে পেটানোর দায়ে তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

মঙ্গলবার সকালে বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভাশেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

শাহাদাতকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধের পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। ৫ বছর সাজার মধ্যে প্রথম তিন বছর পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং পরবর্তী দুই বছর মওকুফযোগ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে শাহাদাতকে।

ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ ওই দিন ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের কাছে। সেই অনুযায়ী বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নিল।

শৃঙ্খলাজনিত কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার শাস্তির মুখোমুখি হন বাংলাদেশ দলের এ পেসার। তবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেননি শাহাদাত হোসেন।

দেশের ক্রিকেটে ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে পরিচিত এই ডানহাতি পেসারকে এর আগে নিজ বাসার শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেলে যেতে হয়েছিল। একই মামলায় জেলে ছিলেন তার স্ত্রীও।

১৮ নভেম্বর সোমবার জাতীয় ক্রিকেট লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে সতীর্থ আরাফাত সানি জুনিয়রকে মারধর করে আবারও সংবাদ শিরোনামে আসেন শাহাদাত।

খুলনায় জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ ছিল রোববার। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে খুলনার বিপক্ষে ঢাকা বিভাগের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন শাহাদাত। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে এই অপকর্ম ঘটান জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলা এ পেসার।

বল ঘষে উজ্জ্বল করা নিয়ে ঝামেলা শুরু। ম্যাচ চলাকালীন সতীর্থ অফ স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়রকে বল ঘষে দিতে বলেন শাহাদাত। প্রথমে বল ঘষে দিতে অস্বীকৃতি জানান আরাফাত। এর পর হালকা কথা কাটাকাটি শুরু। শাহাদাতের কথায় উত্তর দেন আরাফাতও। এর পরই তাকে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন শাহাদাত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রথমে চড়, পরে আরাফাতকে লাথি মারা শুরু করেন তিনি। আম্পায়ার এসে সরিয়ে দেয়ার পরও শাহাদাত আবার গিয়ে মারতে থাকেন। পরে সতীর্থরা তাকে একরকম জোর করেই নিয়ে যান মাঠের বাইরে।

আচরণবিধির লেভেল ফোর অপরাধের দায়ে ম্যাচের শেষ দুদিন বহিষ্কার করা হয় শাহাদাতকে।

সোমবার এ ঘটনার পর বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছিলেন, ‘ম্যাচ রেফারি উল্লেখ করেছেন যে লেভেল ৪ ভেঙেছে শাহাদাত। এই ধারা ভাঙলে এক বছর থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ার নিয়ম। মঙ্গলবার টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই মোতাবেক আজকের সভায় শাহাদাতকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করা হলো।

এদিকে পেসার শাহাদাত এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। সোমবার এ ঘটনার পর ৩৩ বছর বয়সী এ পেসার বলেন, ‘আমি অনেক বড় ভুল করেছি। ওই কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত। আমি অনুতপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমার মাথা ঠিক ছিল না। এখন বুঝতে পারছি কাজটি ভালো হয়নি। আমি বিসিবিতে গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করব। কৃতকর্মের জন্য বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুতাপ ও দুঃখ প্রকাশ করব।’

এর আগে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেল থেকে ফিরেও সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন শাহাদাত। জেলে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জীবিকার কথা ভেবে আবার ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি দিয়েছিল বিসিবি।

বাংলাদেশের হয়ে ৩৮ টেস্ট, ৫১ ওয়ানডে ও ছয়টি টি২০ খেলেছেন শাহাদাত। সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৫ সালে।

Share