চাঁদপুরের পাট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাই প্রায় ১ যুগ ধরে চালাচ্ছেন দু’টো অফিস। এর একটি হচ্ছে চাঁদপুরের মঠখোলার ওয়াপদা গেইটে জেলা পর্যায়ের ‘পাট অধিদপ্তর’ ও হাজীগঞ্জ উত্তর টোরাগড়ে অবস্থিত ‘পাট অধিদপ্তর’।
এ দুটো অফিসে একজন কর্মকর্তা ছাড়া বাকি ১০ টি পদই শূন্য পড়ে আছে।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুরের মঠখোলার ওয়াপদা গেইটে জেলা পর্যায়ের পাট অধিদপ্তরের মূখ্য পরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো.ইসমাইল হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বিষয়টি জানান।
এক সময়ে কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবে ও কৃষিপণ্য পাটের গৌরবময় ইতিহাসের জন্যে চাঁদপুর পুরাণ বাজারে স্টার আল কায়েদ, ডব্লিউ রহমান ও হাজীগঞ্জের হামিদিয়া জুট মিলটি স্থাপিত হয়। মিলগুলোর কাঁচা পাট সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে চাঁদপুরে ও হাজীগঞ্জে এ দু’টো কার্যালয়ও স্থাপন করা হয়।
এ অফিস দু’টো চাঁদপুর, হাইমচর, তৎকালীন বৃহত্তর মতলব ও হাজীগঞ্জ, কচুয়ার ও শাহারাস্তি এলাকার পাট সংগ্রহ, বাজার মনিটরিং, বাজার দর পরিদর্শন পূর্বক রির্পোট পেশ করতে হয়। বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে এসব কাজ সম্পাদন করতে মারাত্মাক ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, জেলা পর্যায়ের পাট অধিদপ্তরের মূখ্য পরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো.ইসমাইল হোসেন ব্যতীত অন্য যারা ছিলো তারা সবাই এক এক করে অবসরে যান এবং কেউ বা মৃত্যুবরণ করেন। ফলে চাঁদপুরের পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শক ও হাজীগঞ্জ উত্তর টোরাগড়ে অবস্থিত পাট অধিদপ্তরের প্রায় ১০ টি পদ শূন্য। বর্তমানে জেলা কার্যালয় হিসেবে কম্পিউটার ও এমএলএসের পদগুলোও শূন্য ।
এত অবহেলিত এ অধিদপ্তরটির কাজ কী-এমন প্রশ্নের উত্তরে মূখ্য পরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো.ইসমাইল হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘চাঁদপুর জেলা অনেক আগ থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে সুপরিচিত। একসময় এ অঞ্চরে প্রচুর পাট উৎপাদন হতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্য পাটের বাজারকে নষ্ট করে দেয় । ফলে পাটের বাজারেও মন্দাভাব সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে চাঁদপুরে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার ২০১০ রাস্তবায়নে কাজ করছি।পাটজাত মোড়কের ব্যাপারে জেলার প্রতিটি উপজেলা মনিটরিং করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সহযোগিতা করছি।’
প্রসঙ্গত, সরকারি পরিপত্রের মর্মমতে ২৬ নভেম্বর ২০১৭ চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত মতে কোনো অবস্থাতেই প্লাস্টিক মোড়কে কোনো পণ্য চাঁদপুর জেলা সদরে বা শহরে প্রবেশ করতে পারবেনা এবং জেলা সদর থেকে কোনো যানবাহন বাহির হতে পারবে না। প্লাস্টিকের মোড়কে কোনো প্রকার পণ্যবাহী যান ২৬ নভেম্বর ২০১৭ থেকে শহরে প্রবেশ অবৈধ করা হয়।
এ ব্যাপারে সাড়াঁশী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে পাট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রটি জানান।
ধান, চাল, সার, চিনি, গম, ভূট্টা প্রভৃতি পাটজাত ব্যাগে মোড়ক করার নির্দেশনা রয়েছে। প্লাস্টিক মোড়কের পণ্যবাহী সকল প্রকার যানবাহন মোবাইল কোর্টের আইনে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
পণ্য সরবরাহ ও বিতরণের কৃত্রিম মোড়কের ব্যবহার সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিত করণে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এবং পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩ প্রণীত হয়েছে।
ওই আইন অনুসারে ৬ টি পণ্যে অর্থাৎ ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনি বর্তমানে আরো ১১ টি মোট ১৭ টি পণ্যের মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার সরকার বাধ্যতামূলক করেছে।
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ৩০ নভেম্বর ২০১৭ থেকে মোড়কীপণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
চাঁদপুরে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সফলতা কতটুকু অর্জিত হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মূখ্য পরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো.ইসমাইল হোসেন বলেন,‘ চাঁদপুরে চাল ও ধানের ক্ষেত্রে শতভাগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৬০% অর্জিত হয়েছে।’ ২০১৯-’২০ সালের মধ্যেই সব ক্ষেত্রে শতভাগ অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি দু:খভারাক্রান্ত মনে বলেন, ‘জনবল সমস্যার কারণে সব কাজ করা যাচ্ছে না।’
প্রতিবেদক : আবদুল গনি