শিশুকালে হারিয়ে যাওয়া সবুজ ১৭ বছর পর বাবা-মায়ের সন্ধান পেলেন। ২৪ এপ্রিল শুক্রবার জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে তিনি সবুজের হারিয়ে যাওয়া বাবা মাকে স্টুডিওতে নিয়ে আসেন। মা ছেলে দুজনেই একে অপরকে দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। এ সময় আবেগঘন একটি মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। যদিও পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য উভয়ের বিভিন্ন স্মৃতি ও তথ্য মেলানো হয়। সবুজ বর্তমানে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সবুজ চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রামের খলিল মেম্বার বাড়ির আবুল বাসার মিয়ার (বাসু) ছেলে। ২০০৪ সালে দাদার সঙ্গে ঢাকায় খালুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে চাঁদপুরে ফিরে আসার সময় ডেমরা এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। এরপর দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সবুজ তার দাদা লাল মিয়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাতে ফুফু এবং খালুর বাসায় বেড়াতে যান। খালুর বাসায় কয়েকদিন বেড়ানোর পর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে দাদা-নাতির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেখান থেকেই দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সবুজ নিখোঁজ।
একা হয়ে গিয়ে সবুজ বসে বসে কাঁদতে থাকেন। তখন এক মুদি দোকানদার সবুজকে বাসায় নিয়ে যান। পরদিন তিনি ডেমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন… ১৭ বছর পর বাবা-মার সন্ধান পেলেন শাহরাস্তির সবুজ
সবুজের পরিবারের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় থানা পুলিশ ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর কাছে সবুজকে হস্তান্তর করে। এনজিওটি কয়েক মাস তাদের কাছে রেখে সবুজের পরিবারের সন্ধান না পেয়ে ২০০৫ সালে আরেক বেসরকারি এনজিও ‘ফ্যামিলিজ ফর চিল্ড্রেন’-এর কাছে হস্তান্তর করে।
ফ্যামিলিজ ফর চিল্ড্রেনের পরিচালক শিখা বিশ্বাস জানান, সবুজ অনেক মেধাবী ছাত্র। তাই স্থানীয় স্পন্সরের সহযোগিতায় আমরা তাকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে।
শুক্রবার জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে সবুজ ও তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদেরকে একত্রিত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেনের পরিচালক শিখা বিশ্বাস।
ভিডিওতে দেখা যায়, সম্পর্ক নিশ্চিত হওয়ার জন্য যেমনি মা তার বাল্যকালে পুড়ে যাওয়া ছেলের মাথায় দাগ খুঁজে বের করেন তেমনি ছেলেও তার শরীরে বাল্যকালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় চিহ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে মা খোদেজা বেগম অকপটে বলে দেন তার একটি পা ভাঙা। এই দুটি বিষয় আপন ঠিকানায় প্রকাশিত আগের ভিডিওটিতে গোপন রাখা হয়েছিল। এছাড়া আপন ঠিকানার উপস্থাপক আর জে কিবরিয়া তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য সব ধরনের তথ্য প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করেন।
২৪ এপ্রিল শনিবার সবুজের মামা রাশেদ আলম বলেন, ‘বাবা মা তাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের সন্ধান পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে আছেন। লকডাউন শেষে দেখা করার কথা থাকলেও যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা এর মধ্যেই সবুজের সঙ্গে দেখা করি। পরে সে বাবা-মায়ের সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেইলসহ অন্যান্য যোগাযোগ আমি করলেও লকডাউনের কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি স্টুডিওতে যাইনি। আমার বড় ভাই মাসুদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
বাবা মায়ের কোলে ফিরে আসা সবুজ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এতগুলো বছর পর হারিয়ে যাওয়া বাবা মাকে ফিরে পেয়েছি সে আনন্দ এবং উপলব্ধির বিষয়টি মুখের ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বাবা মায়ের সঙ্গে কয়েকটি দিন কাটানোর ইচ্ছা আছে।’
মানুষের কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত থেকেই আশেপাশের এবং বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে বাড়িতে সারারাত বাড়ির উঠোনে বসে ছিলাম। বাবা কি ফিরে পেয়েছি পরিবার ফিরে পেয়েছি খুব ভালো লাগছে।
চাঁদপুর করেসপন্ডেট,২৪ এপ্রিল ২০২১