চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের একাতড়ি গ্রামের শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে এসে নব বিবাহিত জামাই নিখোঁজ হয়েছে।
এ নিয়ে এলাকা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নতুন জামাইর বাড়ীতে আহাজারী চলছে। এ নিয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় পৃথকভাবে একটি জি.ডি ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৭ মার্চ শনিবার মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়াগাঁও জাহাজী বাড়ীর হাজী আব্দুল মান্নান জাহাজীর কনিষ্ঠ পুত্র মালয়েশিয়া প্রবাসী আবু সুফিয়ান সোহাগের সাথে পরিবারিকভাবে উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের একাতড়ি গ্রামের মিজি বাড়ীর হাজী মোঃ কলিমুল্লার ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার (১৮) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের ১ দিন পর গত ৯ মার্চ নব বিবাহিত আবু সুফিয়ান তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে (ফিরতি) বেড়াতে যায়। এরপর রাত প্রায় সাড়ে ৮ টায় আবু সুফিয়ান শ্বশুর বাড়ীতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল আসলে বাসা থেকে সে বের হয়ে যায়। অনেক্ষণ যাবৎ বাসায় ফিরে না আসায় শ্বশুর বাড়ীর লোকজন বাড়ী ও আশপাশ এলাকায় খোঁজাখুজি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে না পেয়ে রাত সাড়ে ১২ টায় স্ত্রী শারমিনের বড় ভাই তাজুল ইসলাম শাহরাস্তি থানায় জি.ডি করেন।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে শারমিনের ভাই ওমর ফারুক তার বড় ভাই তাজুল ইসলামকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলিয়ে দেন। তার অনুমতিক্রমে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য ভগ্নিপতি মোঃ মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেন।
প্রায় ২০ মিনিট পর মিজানুর রহমান তার শ্বশুর বাড়ীতে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় তার ছোট ভায়রা তার শালিকে নিয়ে বেড়াতে আসেন। সেই সময় থেকে তিনি তাকে সময় দিয়ে আসছেন। এক পর্যায়ে তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। তিনি সে সময় কথা বলেন। এরপর দুইজন গিয়ে এশার নামাজ মসজিদে পড়তে যান।
নামাজ পড়ার পর তারা দু’জন বাড়ীতে ফিরেন। এর কিছুক্ষণ পর সোহাগের ফোনে আবার কল আসে। তিনি তা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাড়ী থেকে বের হয়ে যান। মিজানুর রহমান আরও জানান, সোহাগ অনেকক্ষণ যাবৎ ঘরে ফিরে না আসায় তিনি তাকে খুঁজতে বাহির হন। বাড়ীর চারপাশে তাকে দেখতে না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে কল করেন। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান। এক পর্যায়ে সোহাগ তার ভায়রাকে ফোন করে বলেন বাড়ীর উত্তর পার্শ্বে তাকে কিছু লোক আটক করেছে। এ সংবাদ পেয়ে মিজানুর রহমান সেখানে গিয়েও তাকে পায়নি বলে জানান।
এরপর রাত সাড়ে ১২ টায় শারমিনের ভাই তাজুল ইসলাম শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি জিডি করেন। এদিকে সোহাগ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শুনে সোহাগের বাড়ীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মা, বাবা, ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। সোহাগের মা সুফিয়া বেগম (৬৫) জানান, বিয়ের পর থেকে সোহাগের স্ত্রী তার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি।
তাদের ধারণা, শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা তার ছেলেকে অপহরণ করেছে। এদিকে সোহাগের পিতা আব্দুল মান্নান জাহাজী ছেলের শ্বশুর বাড়ীর ৫ জনকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ঘটনার সাথে শারমিন ও তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমানকে দায়ী করা হয়েছে। শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক মামুন জানান, রাতে ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য আইনী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নিখোঁজের ঘটনাটি অপহরণ, হত্যা নাকি গুম – এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দিনভর বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কি নিয়ে এ ঘটনাটি ঘটতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন লোকমুখে মন্তব্য শুনা যায়। অনেকের ধারণা কোন প্রেম সংক্রান্ত কারণে এ ঘটনাটি ঘটতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সোহাগের স্ত্রী শারমীনের সাথে তার তালতো ভাই সুমনের (ভগ্নিপতি মিজানুর রহমানের ছোট ভাই) দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরেই ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
প্রতিবেদক- মাহবুব আলম: