চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ভাসমান বেডে সবজি চারা উৎপাদনের আশাজাগানিয়া সম্ভাবনা। উপজেলার ছিকুটিয়া গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর তীর সংলগ্ন নিচু কৃষি জমিতে যা বছরে প্রায় ৮ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন ও চাষাবাদে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষক অলক বিশ্বাস।
কোন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই জৈব সার ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে যারা উৎপাদন ও সবজি চাষ ক্রমান্বয়ে গোটা উপজেলাসহ বিভিন্ন কৃষক ও কৃষি গবেষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার নিম্নঅঞ্চলের অনেক গ্রামে এ পদ্ধতিতে শাক-সবজির চারা উৎপাদন ও বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে।
শাহরাস্তি উপজেলার নিচু জমি বেশি হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় এখানকার অনেক জমি পানিতে ডুবে থাকায় কোন ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রায় স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও কৃষকের সম্মলিত উদ্যোগে জমির পানিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা টোপাপানা ফোম জাতীয় আগাছা দুকলি বন, কোকাডাষ্ট দিয়ে সরাসরি বেড তৈরি করে তার ওপর সবজি চারা উৎপাদনের চেষ্টা সফল হয়।
চলতি মৌসুমে শাহরাস্তি পৌর এলাকায় ৪২ শতক জমিতে ১২টি বেড তৈরি করে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এ বেড গুলোর দৈর্ঘ্য ৬০ হাত বা ৯০ ফুট, বেডের প্রস্থ ২.৫ হাত বা ৩.৭৫ ফুট পানির উপরে বেডের উচ্চতা ৫” ইঞ্চি, ,পানির নিচে বেডের উচ্চতা ১০” ইঞ্চি।
এ ভাসমান বেদ বেড গুলোতে কুমড়া সিম পেঁপে করলা টমেটো লাল সহ আরেক রকমের শাক সবজি চারা উৎপাদন করা হচ্ছে এক একটি বেড হতে প্রায় চার বার চারা উৎপাদন করা হয় শাক-সবজি চারা উপজেলা স্থানীয় বাজার ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয় বেডে চারবার চারা উৎপাদনে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও এতে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা চারা বিক্রি করা যাবে। ফলে ১২টি বেড হতে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হবে বলে আশা করা যায় এ প্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলরাম সাহা কৃষক অলক বিশ্বাসকে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির প্রভাবে এই এলাকায় নিচু জমিতে চাষাবাদের চ্যালেঞ্জকে ভাসমান বেডে চাষ পদ্ধতি দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব। তিনি আরো জানান ভাসমান বেড পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষক অলক বিশ্বাসের সফলতায় স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আগ্রহী কৃষকদের ভাসমান বেড পদ্ধতিতে চাষাবাদে উপজেলা কৃষি অফিস হতে নিয়মিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত থাকবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিও আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুরে কাজ করে যাচ্ছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে চাঁদপুর জেলার নিচু ও পতিত, জলমগ্ন অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনা যাবে পাশাপাশি স্থানীয় জলবদ্ধ এলাকায় (খাল, হাওর বা বিলে) সারা বছর সবজি উৎপাদন করা যাবে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান কৃষি জমি হ্রাস সত্বেও কৃষি উৎপাদন তথ্য সার্বিক কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’
প্রতিবেদক: জামাল হোসেন, ১৬ অক্টোবর ২০২৩