চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের নিজমেহার গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর বাচ্চু মিয়ার মেয়ে মিতু আক্তার (১৭) ২ ডিসেম্বর (বুধবার) বিষপান করে। তাকে শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
তার মৃত্যু নিয়ে এলাকায় শুরু হয় নানা গুঞ্জন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু প্রেমের ঘটনা উদঘাটন করতে গিয়ে নানা রহস্য বের হয়ে আসছে।
ঘটনার বিবরণে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মিতু আক্তার শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে গত ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ঘোষবাড়ির পরিমল ঘোষকে মিতুর সন্ধান দেওয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। পরিমলের ছেলে লক্ষ্মণ ঘোষ তাদের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে তারা দাবি করে।
এদিকে পরিমল ঘোষ ও পার্শ্ববর্তী সিদ বাড়ির আতু মিয়ার পুত্র মনির হোসেনকে সাথে নিয়ে লাকসাম উপজেলায় তার ছেলে লক্ষ্মণ ঘোষের কাছে যায়। লক্ষ্মণ লাকসাম একটি মিষ্টি দোকানে কাজ করতো।
একটি সূত্রে জানা যায়, পরিমল ও মনির লক্ষ্মণের কাছ থেকে মিতুকে উদ্ধার করে শাহরাস্তিতে নিয়ে আসে। তারা মিতুকে দোয়াভাঙ্গায় ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলে। এরপর মিতু তার বাড়িতে না গিয়ে পার্শ্ববর্তী ছাড়াবাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর মিতু মনিরের বাড়িতে আসে। সেখান থেকে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে তার নানার বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার হাড়িয়া হাজী বাড়িতে রাখে। সেখান থেকে ২ ডিসেম্বর বুধবার সকালে মিতু তার নানী মনোয়ারা বেগম সহ তার খালার বাড়ি মোল্লা বাড়িতে আসে। এর কিছুক্ষণ পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় নানী ও খালা সহকারে তাকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণপর তার মৃতু ঘটে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার সাঈদুস সাকালান জানান, তাকে ৯ টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয়। ১০ টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু ঘটে। বিষক্রিয়াজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান।
মিতুর মৃত্যুসংবাদে উত্তেজিত এলাকাবাসী বখাটে লক্ষ্মণের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করে ও তার পিতা পরিমলকে বেদম মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এদিকে ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মিতু আক্তারের সাথে নিজমেহার গ্রামের মিজি বাড়ির আবুল কালামের ছেলে আবুল হাসান রাজুর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। রাজু ও লক্ষ্মণ দুজনই ভালো বন্ধু। তাদের প্রেমে সহযোগিতা করতো লক্ষ্মণ। গত ২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মণ মিতুকে নিয়ে চলে উধাও হওয়ার পর তারা সিলেট চলে যায়। কিন্তু ওই সময় রাজু শাহরাস্তিতে অবস্থান করছিল।
এ ব্যাপারে রাজু কিছু না জানলেও মিতু জানতো লক্ষ্মণ মিতুকে রাজুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। লক্ষ্মণের বাবা পরিমলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে অভিযোগ করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. মাহবুব আলম, শাহরাস্তি করেসপন্ডেন্ট
|| আপডেট: ০৮:৪৩ পিএম,০২ ডিসেম্বর ২০১৫, বুধবার
এমআরআর