চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক বিবাদে আলমগীর হোসেন (৩৭) নামে তিন সন্তানের জনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (১৭ মার্চ) রাে উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসেন মানিকের বিল্ডিংয়ের ছাদে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত আলমগীর হোসেন ওই গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। আলমগীর হোসেন গাড়ি চালাতো। এদিকে আলোচিত ওই হত্যাকান্ডের একদিনের মাথায় রহস্য উন্মোচন করে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দুই নারী মা ও মেয়েকে পুলিশ আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হলেন, ভবনের মালিক আবুল হোসেনের স্ত্রী খোদেজা বেগম পান্না (৫০) তাদের মেয়ে, জনৈক তুষারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার সোনিয়াকে(৩০)।
১৮ মার্চ মঙ্গলবা বিকেলে আটক মা ও মেয়েকে চাঁদপুর কোট হাজতে প্রেরণ করা হয়। একই সঙ্গে নিহত আলমগীরের মরদেহ চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
এর আগে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে নিহত আলমগীর হোসেনের ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিল্ডিং এর মালিক আবুল হোসেনের স্ত্রী খোদেজা বেগম পান্না এবং তাদের মেয়ে মাহমুদা আক্তার সোনিয়াকে অভিযুক্ত করে শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার (১৫) তারিখ: ১৮/০৩/২০২৫ইং ধারা ৩০২/৩৪ দঃবিঃ।
মামলার এজাহার সূত্রে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহতের সাথে অভিযুক্ত দুই নারী মা খোদেজা এবং মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়াদি জড়িত রয়েছে। ওই বিবাদের ধুম্রজালে হত্যাকান্ডটি ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। একই সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত রয়েছে পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।
এদিকে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সোনিয়া এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। সোনিয়া তার সাথে আলমগীরের সম্পর্ক ছিল বলেও জানায়। আলমগীর তাকে খুবই বিরক্ত করতো। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সোনিয়া জানায়, উপজেলার চিতোষী বাজার থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি কেনা হয়। ওই ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হত্যা করা হয় তাকে।
নিহত আলমগীরের স্ত্রী তাছলিমা বেগম জানান, আমার স্বামী সোনিয়ার কাছে ১২ লাখ টাকা পাবে। টাকা দিবে বলে সোনিয়া ফোন করে আমার স্বামীকে বাসায় নিয়ে খুন করে। পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ওই রাতে প্রবাসী গৃহকর্তা মানিকের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে তার সম্পর্কে ছোট ভাই নজরুল ইসলাম শিপন তারাবির নামাজ আদায় শেষে ঘরে ফিরছিলেন। ওই এলাকা অতিক্রমের সময় ঘটনা সংঘটিত হওয়া বিল্ডিংয়ের ছাদে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। পরে তিনি চোর চোর বলে চিৎকার করে ওই বিল্ডিং এর গৃহকর্তী প্রবাসী মানিকের স্ত্রী তার সম্পর্কে ভাবি খোদেজা বেগমসহ ছাদে উঠেন শিপন।
উঠেই দেখেন,পার্শ্ববর্তী নতুন বাড়ির মৃত শহীদ উল্লাহর পুত্র আলমগীর হোসেনকে কেবা কারা গলা কেটে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাহত করে নিথর দেহ ফেলে রেখেছে। পরে তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে একই দৃশ্য দেখতে পেয়ে সেখানে ভীড় জমায়। ওই সময় নিহতের স্বজন মো. জাহিদ হাসান ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে ৯৯৯ ফোন দিয়ে ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করেন। পরে মুহূর্তের মধ্যে ওই সংবাদ চারদিকে চাউর হলে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আবুল বাসার একদল পুলিশ সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে ঘটরাস্থলে হাজির হন।
অপর দিকে মধ্যরাত অবধি পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাইন হোসেন, কচুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রিজওয়ান সাঈদ জিকোসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৮ মার্চ ২০২৫