চাঁদপুরের শাহরাস্তির খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন) এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বুধবার (১৫ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর মা।
জানা যায়, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেনির প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন) শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার প্রতিদিনের ন্যায় বিদ্যালয়ে আসে।
বিদ্যালয়ে আসার পর সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম তাকে অশালীন বাক্য বিনিময় করেন। শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের আচরণে তাকে বেয়াদব বলে প্রতিউত্তর করে। এতে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমানকে ভুল বুঝিয়ে বেদম প্রহার করায়। শিক্ষকের প্রহারে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী নারায়ণ মাস্টারের বাড়ির সম্মুখে গেলে শিক্ষক কাউছার আলম তাকে পুনরায় বেত্রাঘাত করে। এতে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়লে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (আয়া) মায়া রানি তাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। মা মুকছুদা বেগম মেয়ের শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে দ্রুত শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা করান। পর দিন ১৫ মার্চ তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
শিক্ষার্থীর মা মুকছুদা বেগম জানান, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন)। ঘটনার দিন বিকেলে বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রানি আমার মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। মেয়ের এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা তাকে বেদম প্রহার করেছে বলে আয়া জানান। আমিও, মেয়ে অন্যায় করেছে ভেবে তাকে মারতে উদ্যত হই। মেয়ের কাছে জানতে পারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার আলম তাকে কুরুচিপূর্ণ কথা ও নোংরা দৃষ্টিতে তাকানোর কারণে তাকে বেয়াদব বলেছে। তিনি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমানকে দিয়ে বেদম প্রহার করান। ঘটনার দিন মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ডাঃ মাহফুজুর রহমান ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে ঘটনা অবহিত করি। তারা আমার মেয়ের অবস্থা দেখেন কিন্তু কোন শান্তনা বা প্রতিকারের আশ্বাস দেননি। আমি মেয়েকে নিয়ে থানায় গেলে ওসি সাহেব সমবেদনা জানান এবং ইউএনও স্যারের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি পরদিন ১৫ মার্চ ইউএনও স্যারের বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম জানায়, ঘটনার দিন কাউছার স্যার আমার দিকে নোংরা দৃষ্টি ও অশালীন কথা বলায় আমি তাঁকে বেয়াদব বলি। তিনি মজিবুর স্যারকে ভুলভাল বুঝানোয় তিনি আমাকে বেদম প্রহার করেন । সে আরো জানায়, দুই আড়াই মাস পূর্বে টিকা দিতে গেলে কাউছার স্যার আমাকে তার সাথে সম্পর্ক করা ও অনেক নোংরা প্রস্তাব দেয়। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি বিভিন্নভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমান বিএসসি জানান, শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে প্রায়ই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জ্বালাতন করে। ঘটনার দিন তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার মাকে ফোন দেয়া হলে মেয়েটি বাড়ির দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে তার মাকে আটকে এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এক পর্যায়ে শিশুটি সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ঢিল ছোঁড়া শুরু করলে আমি বেত হাতে ভয় দেখিয়ে তাকে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।
অপর অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ কাউছার আলম জানান, মেয়েটি বিভিন্ন সময়ে আমাকে ও অন্যান্য শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জ্বালাতন করতো। মানসিক সমস্যার কারণে তার আচরণ শিষ্ঠাচারের বাইরে চলে যেত। এক পর্যায়ে এসবের প্রতিকার না পেয়ে এখান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার আবেদন দিয়েছি। ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমি ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে শিশুটিকে মৃদু বেত্রাঘাত করেছি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, শিশুটির অস্বাভাবিক আচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল বিধায় তার সুচিকিৎসার জন্য অভিভাবকদের অনেকবার জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় গত ডিসেম্বর মাসে পরিচালনা কমিটির সভায় তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার অভিভাবককে এ বিষয়ে নোটিশ দেয়া হলে তারা তা গ্রহণ করেন নি। ঘটনার দিন তাকে মৃদু শাসন করে বাড়িতে পাঠালে তার মা সেখানে তাকে পুনরায় শাসন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার জন্যই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে।
তিনি আরো দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ছাত্রীকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাওয়ার নোটিশ করায় পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশীদ জানান, ছাত্রীর মা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শাহরাস্তি প্রতিনিধি, ১৭ মার্চ ২০২৩