চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় পরকিয়া প্রেমিককে সাথে নিয়ে চাচীর বিরুদ্ধে ভাতিজি হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শাহরাস্তি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডস্থ পূর্ব উপলতা গ্রামের বেপারী বাড়ীতে বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত যুবতি রুমা আক্তারের পিতা আনা মিয়া বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস ও পরকিয়া প্রেমিক জহিরকে বিবাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-১৫, তাং-২৪/০৩/২০১৬ ইং।
অভিযোগ দায়েরের পর পরকীয়া প্রেমিক জহির লাপাত্তা তবে পুলিশ অভিযুক্ত জান্নাতকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
থানায় নিহতের পরিবার দায়ের করা অভিযোগ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব উপলতা বেপারী বাড়ীর রিক্সা মেস্ত্রী আনা মিয়ার কন্যা রুমা আক্তার (২২) দু’বৎসর ধরে তার চাচা হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ার (৩৩) ঘরে বসবাস করে আসছিল। ২ বৎসর পূর্বে চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবির মারা যাওয়ার পর থেকে পশ্চিম উপলতা বেপারী বাড়ীর তাজুল ইসলামের পুত্র মো. জহির (৩০) সাথে জান্নাতুল পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক হয়। সেখান থেকে দু’জনের শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে রুমা আক্তার তার চাচী ও জহিরের সাথে দৈহিক সম্পর্কের ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখতে পেতো। রুমা তার চাচীকে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার বারণ করে এবং একপর্যায়ে গিয়ে বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগে জানানো হয়।
খুনের ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫ টায় পরকীয়া প্রেমিক জহির ও জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া রাতের কোনো এক সময়ে রুমা আক্তারকে গলায় ওড়না পেছিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নিজেদের বাসার একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। একপর্যায়ে জান্নাতুল ফেরদাউস ও জহির মিলে পাখার ওপর থেকে তার লাশ সরিয়ে এনে খাটের মধ্যে ফেলে রাখে। পরে জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া রুমাদের ঘরে গিয়ে মেয়েটির বাবা আনামিয়া ও মা রেনু বেগমকে রুমা স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে।
পরে মায়া বেগম ও পরকীয়া প্রেমিক জহির মিলে তড়িগড়ি করে রুমার লাশ দাফনের প্রস্তুতি শুরু করে। ৩০ মিনিটের মধ্যে কবর খোড়া, কফনের কাপড়ও সংগ্রহ করে।
পরে রুমার লাশ গোসল করানোর সময় তার গলায় হাতের চাপ ও ফাঁস লাগানোর চিহ্ন দেখতে পেয়ে উপস্থিত মহিলাদেরকে অবহিত করলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে সকলে মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
এরপর শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে ও ঘাতক চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঘাতক চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া ২ সন্তানের জননী। মায়া নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার কলেজ রোড চেয়ারম্যান বাড়ীর আব্দুর রবের কন্যা।
এ বিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ দিলদার আজাদ জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরকিয়া প্রেমিক জহির ও জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া যুবতি রুমা আক্তারকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তার চাচী জান্নাতুল ফেরদাউসকে আটক করা হয়েছে ও লাশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও জহিরকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে আটককৃত চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস জানায়, জহির ইলেক্ট্রিক কাজের সুবাদে দীর্ঘ এক বৎসর যাবৎ আমার বাসায় আসা যাওয়া করতো। সে সুবাদে তার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি রুমার নজরে পড়লে রুমা আমাকে ও জহিরকে বিয়ে করে ফেলার পরামর্শ দেয়। আমি তার পরামর্শটি মাথায় নেইনি। বাল্যকাল থেকেই রুমা আমার বাসায় বসবাস করতো এবং আমাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতো। রুমা হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ঘটনার পর থেকে চাচীর পরকিয়া প্রেমিক ঘাতক জহির পলাতক রয়েছে। এছাড়াও তার মুঠোফোন ০১৭৪১৭৮৭৩৪১ বন্ধ পাওয়া যায়।
সংবাদের সর্বশেষ ফলাফল – শাহরাস্তিতে রুমা হত্যা মামলায় চাচি ও পরকীয়া প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
প্রতিবেদক- মো. মাহবুব আলম, শাহরাস্তি করেসপন্ডেন্ট