‘দীর্ঘদিন রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি, তখন অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমার পায়ে গুলি করার শাস্তিও চেয়েছি অনেকবার। তবে এখন খুব খারাপ লাগছে। আমাকে গুলি করছিলো বলে এমপি সাহেবের শাস্তি চাইছিলাম। কিন্তু তাই বলে তার মৃত্যু চাই নাই।’
কথাগুলো বলছিলেন গত এক বছর আগে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে আহত স্কুলছাত্র শাহাদাত হোসেন সৌরভ।
গত বছরের ২ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সৌরভ তার চাচার সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিল। সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়ক দিয়ে তখন গাড়ি করে যাচ্ছিলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে এমপি লিটন গুলি চালান। এসময় একটি গুলি সৌরভের বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে। আরেকটি গুলি ডান পায়ের হাড়ে লাগে। এরপর তাকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে রংপুর থেকে বাড়ি ফেরে সৌরভ। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢাকার উত্তরা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ এমপি লিটনকে আটক করে। পরদিন ১৫ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৪ দিন বন্দী থেকে ৮ নভেম্বর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। মামলাটি এখনো বিচারধীন আছে।
এঘটনার এক বছর পর গত শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নেতাকর্মীদের নিয়ে বাড়ির নিচতলায় বৈঠক করছিলেন। এসময় তিন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির সামনে এসে থামে। একজন মোটরসাইকেল চালু রেখে বসে থাকে। এসময় এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার ঘরের সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। দু’জন বেতারের কাছে এসে এমপি লিটন ঘরে আছেন কিনা তা জানতে চান।
শ্যালকের কাছে এমপি লিটনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ঘরে ঢুকে যান হেলমেট পরা ওই দু’যুবক। এর পরেই শুরু হয় এলোপাতাড়ি গুলি। খুব কাছে থেকে বুক লক্ষ্য করে পর পর গুলি ছোঁড়ে যুবকরা। এরপর দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলিতে লুটিয়ে পড়েন এমপি। তার বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই এমপিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, এমপি লিটনকে বাঁচানোর চেষ্টায় তারা সফল হননি। তিনি জানান- লিটনের বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি লেগেছিলো।
এদিকে এমপি লিটনের এমন মৃত্যু মানতে পারছে না সৌরভ ও তার পরিবার। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া।
তিনি জানান, ‘সাংসদ লিটনের গুলিতে আহত সৌরভ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। যারাই এমপিকে হত্যা করে থাকুক, আমি তাদের শাস্তি চাই।’
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ০০ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ