ফরিদগঞ্জে বৃদ্ধ স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে শারীরিক নির্যাতনের খবর শুনে মারা গেছেন স্বামী আবদুল লতিফ। হৃদযন্তের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকের ধারণা। হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে ওই ঘটনা ঘটেছে উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের মিঞা রাজা মিজি বাড়িতে।
সরেজমিন জানা গেছে, আবদুল লতিফ (৮০) ও রহমত উল্লাহ (৫২)’র বসত ঘর পাশাপাশি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই ঘরের বেড়ায় পেরাগ মেরে টিন দ্বারা মাঝের চিলতে ভূমি বন্ধ করে দেন রহমত উল্লাহ। আবদুল লতিফ এর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ওই টিন খোলার চেষ্টা করেন। এতে, রহমত উল্লাহর স্ত্রী, সন্তানসহ মনোয়ারাকে শারীরিক নির্যাতন করলে তিনি আহত হন ও জ্ঞান হারান। এ খবর শুনে অন্য ঘরে স্বয়নরত স্বামী আবদুল লতিফ মারা যান।
হাফেজ আমিন (৫২) জানান, ভাবীকে মারার খবর শুনে আমার ভাই আবদুল লতিফ চিৎকার দেন। এরপর তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। ভাই এর দেহ চাদরে ঢেকে ভাবীকে নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। জরূরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে রাত ১০ ঘটিকায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ভাবী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানেন না।
ভূক্তভোগীরা বলেছেন, দু’পক্ষের অন্তত ১০টি মামলা ও অভিযোগ বিজ্ঞ আদালতসহ বিভিন্ন বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রহমত উল্লাহর দায়েরকৃত মামলার অন্তত চারটি খারিজ হয়েছে। যেখানে টিনের বেড়া লাগানো হয়েছে সেখানে বিজ্ঞ আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে। রহমত উল্লাহ আদালতের আদেশ অমান্য করে টিনের বেড়া লাগিয়েছেন। গতকাল নামাজে জানাজা অনুষ্ঠানের পর ওই বাড়ির ও আশপাশের লোকজন বরেছেন, ঘটনা পরম্পরা সাক্ষ দেয়, রহমত উল্লা একজন মামলাবাজ ও উগ্র প্রকৃতির।
অপরদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিরত রহমত উল্লাহকে দেখা যায় একটি মামলার কাগজ পাশে নিয়ে বেডে বসে আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, বৃদ্ধা আমার টিনের বেড়া ভেঙ্গে ফেলার কারণে আমার স্ত্রী ও পুত্রবধু বাধা দিয়েছে। খবর শুনে আমি এগিয়ে গেলে সিদ্দিকের নেতৃত্বে আমার পুত্রবধু ও আমাকে পিটিয়েছে। আমরা ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্র্তি হয়েছি। মামলার ওই কাগজ দেখিয়ে বলেন, এই যে মামলার রায় আমার পক্ষে। যদিও সেখানে স্থিতাবস্থার উল্লেখ রয়েছে।
ঘটনাস্থল পাশর্^বতী হাইমচর উপজেলার সীমান্ত এলাকা। মৃত্যুর খবর শুনে দুই উপজেলার শত লোক সেখানে উপস্থিত ও আবদুল লতিফের নামাজে জানাজায় শরীক হন।
সেখানে উপস্থিত লোকজন ঘটনার নিন্দা জানান ও আইনগত শাস্তি দাবী করেন। তারা জানান, এ বছরের মার্চ মাসে রহমত উল্লাহ ও তার লোকজন আবদুল লতিফের ছোট ভাই অলি উল্লাহর ওপর হামলা করেন। এতে, তার ভাবী আয়েশা খাতুন (৬০) বাধা দিলে তাকে পেটানো হয়। তাকে উদ্ধারে ছেলের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩০) এগিয়ে গেলে তাকেও পেটানো হয়। ওই ঘটনায় মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মো. সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মনোয়ারা বেগমের বুকে ও পিঠে ফুলা রয়েছে। তার প্রেসার অত্যন্ত উচ্চ ছিল ও ঘামাচ্ছিল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রহমত উল্লা ও জাহানারা বেগম (২০) নামে দু’জন ভর্তি হয়েছেন। অন্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে তার শারীরিক কিছু কন্ডিশন থাকা লাগে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রেসার অস্বাভাবিক থাকা। কিন্তু, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজিস্টার বহিতে রহমত উল্লাহর প্রেসার উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২