‘পরিবারের সবাই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমারও বিয়ে করার ঝোঁক তৈরি হয়। এরপর বিয়ে করেছি। বিয়ের কিছুদিন পরই মনে হয়েছে, বিয়ে করে ভুল করেছি।’ তারকা এক মায়ের কথা জানতে গেলে শনিবার দুপুরে অস্ট্রেলিয়া থেকে এমনটাই জানান দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর।
শাবনূর বলেন, ‘নিজের রাজ্যে আমি নিজেই রাজা। আমি নিজেই স্বাবলম্বী। আমি নিজে পরিপূর্ণ। আমার সঙ্গে আরেকজন থাকলে যে কী উপকার, সেটাই আমি বুঝিনি। সারা জীবন আমি স্বাধীনভাবে ছিলাম। চলচ্চিত্রে স্বনির্ভর হয়ে কাটিয়েছি, পাশে আরেকজন পুরুষ মানুষ থাকলে কতটা নির্ভার থাকা যায়, সেটা বুঝতে পারিনি। তাই আমার একা থাকা না–থাকায় কোনো কিছু যায় আসে না। আমি আমার মতো বেশ ভালোই আছি।’
বিয়ে জীবনের ভুল, তাহলে বিয়ে করার আগে অন্য কোনো ভাবনা কাজ করেছিল কি? ‘সবাই বলায় হঠাৎ ইচ্ছে হয়। আমিও ভাবছিলাম, বিয়ে করলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতে পারে। কিন্তু ধারণাটাই ভুল। বিয়ের পরও আমার জীবনটা বিয়ের আগের মতোই ছিল। স্বামী–স্ত্রীর জীবন কেমন হয়, বিয়ের পরও তা আমি বুঝিনি। তখনই মনে হয়েছে, বিয়ে করে ভুল করেছি।’
বিয়ে করে সুখী হতে। সবাই সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের সম্পর্কে জড়ায়। চলচ্চিত্রে সফল আপনি কেন মনে করছেন বিয়েটা ভুল ? ‘অবশ্যই ভুল। এভাবে বিয়ে করার কোনো মানেই হয় না। আমিই যদি সবকিছু করতে পারি, তাহলে আরেকজন মানুষ পাশে থাকার কি দরকার। আমার কথা হচ্ছে, যে পুরুষ মানুষটি আমার জীবনের সঙ্গে জড়াবে, সে আর কিছু না পারুক, অন্তত আমাকে স্বস্তির আশ্রয় দিতে তো পারে। সংসারজীবনে আমি এতটাই দুর্ভাগা যে এই শান্তিটুকু আমার হয়নি। বিয়ের পর এক দিনও শান্তি পাইনি। তারপরও মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সন্তান জন্মের পর মনে হলো, না, এর চেয়ে একা থাকাটাই সবচেয়ে ভালো।’
সন্তান নিয়ে একা থাকলেও নিজেকে মোটেও একা ভাবছেন না অভিনয়শিল্পী শাবনূর। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন কখনোই একা না। সব সময় পরিপূর্ণ। একটা সময় আমার পরিবার আমাকে আগলে রেখেছে। সিনেমায় আসার পর দর্শকের ভালোবাসা আমাকে ঘিরে রেখেছে। স্বামীর সংসারে পরিপূর্ণ না হলে সন্তান আমাকে পূর্ণতা দিয়েছে। তা ছাড়া আমার মা, বোন, ভাই সবাই এখনো যৌথ পরিবারের মতোই আছি। সবাই মিলে ভালোই আছি। অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের এত লোকজন, মনেই হয় না আমি একা। এ কথা বলতে পারি, বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের পর আমার জীবন এখন অনেক নির্ভার। সামনে অনেক সুন্দর হবে বলেও আশা করছি। মনে করছি, জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
স্বামী অনীক মাহমুদের সঙ্গে ডিভোর্স চেয়ে গত ২৬ জানুয়ারি নোটিশ পাঠিয়েছেন শাবনূর। গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় এসে এই সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে। বনিবনা না হওয়ার কারণেই সংসারে বিচ্ছেদ চেয়েছেন তিনি।
২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভালোবেসে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন শাবনূর ও অনীক মাহমুদ। বিয়ের পরের বছরই ২৯ ডিসেম্বর এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় ছেলেসন্তান আইজান নিহান। শাবনূরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সন্তান জন্মের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে শাবনূরের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অনেকগুলো বিষয়ে মতের অমিল হচ্ছিল। এরপর আমরা আলাদা থাকা শুরু করি। ভেবেছিলাম, একটা সময় উপলব্ধিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তা আর হয়নি। এরপর অনীকের বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলা হয়। অনেক চেষ্টার পরও বনিবনা হচ্ছিল না দেখে আলাদা থাকা শুরু করি। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে ২৬ জানুয়ারি তালাক নোটিশ অনীকের বাসায় পাঠানো হয়।
শাবনূর আরও বলেন, ‘অভিনয়ে এসে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে সবার ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তৈরি করেছি। সংসারজীবন শুরু করেছিলাম ভালো থাকার আশায়। চলচ্চিত্রে সবার ভালোবাসা পাওয়া আমার হয়তো সংসারজীবনের ভালোবাসা ভাগ্যে লেখা ছিল না। তাই সংসারজীবনে বিচ্ছেদ করতে হয়েছে। অনীকের পরিবার আছে, আমারও পরিবার আছে—দুজনেরই সমাজ আছে, সেখানে দুজন নিজেদের মতো করে থাকুক এটাই চেয়েছি।’
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনীক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল করেন শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তাঁরা। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক ছেলেসন্তানের মা হন শাবনূর। ছেলেকে নিয়ে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। (প্রথম আলো) আরো পড়ুন- অবশেষে স্বামীকে তালাক দিলেন শাবনূর
বার্তা কক্ষ, ৮ মার্চ ২০২০