সারাদেশ

সন্ধ্যা নামতেই শহীদ মিনারে উল্টো দৃশ্য

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে প্রথম প্রহরে ছিল কড়া নিয়ম ও বিধি-নিষেধ। তখন শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে মানতে হয়েছে বেশ কিছু নিয়মকানুন। সতর্ক থাকতে হয়েছে নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ মানুষের। কিন্তু সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতেই শহীদ মিনারের প্রতি গাম্ভীর্য যেন ক্ষীণ হয়ে আসে। শ্রদ্ধার শহীদ মিনার পরিণত হয় নিছক বিনোদন কেন্দ্রে।

শহীদ মিনার ঘুরে দেখা যায়, প্রথম প্রহর থেকে দুপুর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও দুপুরের পর কম থাকতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি। এর ফলে দর্শনার্থীদের অবাধে চলাচল শুরু হয়। অনেকেই জুতা নিয়ে উঠছেন শহীদ মিনারের বেদিতে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে তাদেরকে কিছু বলতে দেখা যায়নি বরং কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও জুতা পায়ে বেদিতে উঠতে দেখা গেছে।

এছাড়া শহীদ মিনারে কাগজ, প্লাস্টিক, বাদামের খোসা, টিস্যু, বোতল ইত্যাদি ফেলে নোংরা করছে অনেকে। শহীদ মিনারে আগত মানুষের কাছে খেলনা সামগ্রী বিক্রি করছে ভ্রাম্যমাণ হকাররা। তাদের কেউ কেউ বেলুন, খেলনা, বাদাম, পানিসহ হরেক রকমের জিনিস বিক্রি করছেন।

ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অমর একুশে পালনে কথা বলা হলেও শুরু থেকেই তা মানা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এক সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচজন মূল বেদিতে উঠে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ সংগঠনগুলোর প্রত্যেক ব্যক্তিই ঠাসাঠাসি করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া বেশিরভাগ দর্শনার্থীর মুখে ছিল না মাস্ক। আর এসব দেখাশোনার জন্য শহীদ মিনারে ছিল না কোনো আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা।

দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ সদস্যকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়, অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। এর ফাঁকে অনেকে জুতা নিয়ে উঠে যাচ্ছে, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে এখানে কেউ না উঠে।

তিনি আরও বলেন, এখন তো তেমন উঠছে না। অন্যান্য দিন বেদির ওপর জুতা নিয়ে বসে গল্প করে সবাই।

জুতা পায়ে বেদিতে উঠা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপনার সমস্যা কোথায়? ছবি তোলার জন্য উঠেছি এখন নেমে যাচ্ছি। নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এসব বিষয় দেখে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন সাভার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ফখরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অনেকেই দেখছি পায়ে জুতা নিয়ে উঠছে, শহীদ মিনারকে নোংরা করছে। এসব দেখে খুব খারাপ লাগে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে না পারলে অন্তত অশ্রদ্ধা জানানো উচিত নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সারাবছর এমনিতেই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে শহীদ মিনার। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনার সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা করি। কিন্তু আজকের দিনে এই নাজেহাল অবস্থা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার বদলে অপমান করা হচ্ছে। শহীদরা বেঁচে থাকলে হয়তো রাষ্ট্রকে বলতো, এরকম লোক দেখানো শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন না করলেই আমরা শান্তিতে থাকি।’

ঢাকা ব্যুরো চীফ,২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Share